Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভিড় টানছে পিঠেপুলি আর জলসা, বই বিক্রিতে ভাটা

 উদ্বোধনের দিন থেকেই খড়্গপুর বইমেলায় ঠাসা ভিড়। শুক্র থেকে রবি, গত তিনদিনে জনস্রোত ক্রমে বেড়েছে। তবে এই ভিড় কি বইয়ের টানে, না নেহাত উৎসব-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য, সেই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, ভিড় থাকলেও বই বিক্রি কম হচ্ছে বলে জানাচ্ছে প্রকাশনা সংস্থাগুলো।

আনাগোনা: স্টলে বই দেখতে লোক জমলেও কিনছেন না। নিজস্ব চিত্র

আনাগোনা: স্টলে বই দেখতে লোক জমলেও কিনছেন না। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৩
Share: Save:

উদ্বোধনের দিন থেকেই খড়্গপুর বইমেলায় ঠাসা ভিড়। শুক্র থেকে রবি, গত তিনদিনে জনস্রোত ক্রমে বেড়েছে। তবে এই ভিড় কি বইয়ের টানে, না নেহাত উৎসব-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য, সেই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, ভিড় থাকলেও বই বিক্রি কম হচ্ছে বলে জানাচ্ছে প্রকাশনা সংস্থাগুলো। যদিও মেলার উদ্যোক্তাদের দাবি, বই বিক্রি হচ্ছে তার নিজের ঢঙে। বইপ্রেমীরা বই কিনে সন্ধ্যার মধ্যেই মাঠ ছাড়ছেন। তার পরে জমছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ভিড়। আজ, সোমবার শেষ দিনে রয়েছে মুম্বইয়ের সঙ্গীতশিল্পী অলকা যাজ্ঞিকের অনুষ্ঠানে ভিড় সামলাতে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড।

আনন্দ, ইভলভ, দে’জ, পুনশ্চ-র মতো জনপ্রিয় সব প্রকাশনা সংস্থা খড়্গপুর বইমেলায় স্টল দিয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি, বইমেলার উদ্বোধনের দিনে স্টলে স্টলে ভিড় ছিল। বই বিক্রিও হয়েছিল ভালই। সেই শনি-রবি কাটতেই বই বিক্রিতে ভাটা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমনিতেই এখন বইপ্রেমীর সংখ্যা কম। যাঁরা নিয়মিত পড়েন, তাঁরাও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ই-বুকে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ফলে, বই কেনার ঝোঁক কমছে। খড়্গপুর বইমেলা উদ্বোধনের দিনে সাহিত্যিক বাণী বসুকেও বলতে শোনা গিয়েছিল, “হয়তো একদিন ছাপা বই থাকবে না। সে জায়গায় দেখা দেবে ই-বুক।”

তবে মেলায় যে নবীন প্রজন্মকে একেবারে বই কিনতে দেখা যাচ্ছে না, তা নয়। একটি ইংরেজি বইয়ের স্টলে দাঁড়ানো সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিল, “সত্যি বলতে ই-বুক চলতে-ফিরতে সাময়িক সময়ে পড়ার জন্য ভাল। আমি ছাপা বই পড়তেই বেশি পছন্দ করি। বাংলা-ইংরেজি দু’ধরনের বই পড়ি। এ বার ইংরেজি বইয়ের টানে মেলায় এসেছি।”

মেলায় ইংরেজি বইয়ের বিক্রি তুলনায় বেশি বলে জানালেন বিক্রেতারা। চিল্ড্রেন বুক স্টল, ইভলভের মতো সংস্থার স্টলে ভিড় দেখা গিয়েছে। অফবিট নামে একটি সংস্থার স্টলে হাজির শ্যামল ধর বলেন, “আমার স্টলে ইংরেজি-বাংলা সব ধরনের বই রয়েছে। এ বার ইংরেজি বই বিক্রি ভাল।” বাংলা প্রকাশনা সংস্থাগুলির স্টলে অবশ্য ভিড় অনেকটাই পাতলা। ‘আনন্দ’র স্টলের দায়িত্বে থাকা শোভন দাস বললেন, “এই বইমেলার সঙ্গে সম্পর্ক এত ভাল যে তাই আসি। কিন্তু এ বার খুব বেশি বিক্রি হয়নি। ব্যোমকেশের বইয়ের চাহিদা রয়েছে।” ‘পুনশ্চ’-র স্টলের দায়িত্বে থাকা সুদীপ্ত পালেরও বক্তব্য, “খুব ভাল বাজার পাইনি। স্টলে বই দেখতে ভিড় জমেছে। কিন্তু প্রতিদিন এক হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়নি।”

সাহিত্যের পাশাপাশি রান্না, সাজগোজ, জ্যোতি, চর্চা, গানবাজনা— নানা স্বাদের বই রয়েছে এই মেলায়। শহরের হস্তরেখাবিদ্‌ দীপক দাশগুপ্ত পাল বুক স্টল থেকে দু’টি এই সংক্রান্ত বই কিনেছেন। তিনি বলেন, “আমি প্রতিবার বইমেলা থেকে এই ধরনের বই কিনি। এক-একটি বই প্রায় হাজার টাকা দামের।” শহরের বাচিক শিল্পী অর্ণব চক্রবর্তী, সঙ্গীতশিল্পী সৌমেন চক্রবর্তীরা বই কিনেছেন। তাঁদের কথায়, “আমরা নিজেদের প্রয়োজনের বহু বই কিনেছি। মেলায় বইয়ের টানেই একাংশ মানুষ আসেন। উৎসব বাড়তি পাওনা। আসলে দু’টি পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে শহরের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।”

তবে মেলার ভিড় বইয়ের স্টলের থেকে পরিবহণ দফতরের স্টল, পিঠেপুলির স্টলেই বেশি। অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সৌরেন দাস মানছেন, “বইমেলার স্টল থেকে হাতে হাতে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করিছি। ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।”

আর মেলা কমিটির সম্পাদক দেবাশিস চৌধুরীর দাবি, “এই মেলায় বই বিক্রি ভাল হচ্ছে। যাঁরা বই কেনেন তাঁরা সন্ধ্যার মধ্যেই বই কিনে ফিরছেন। আর একদল অনুষ্ঠান দেখতে এসে বই কিনছেন। এটাই তো আমাদের মেলার বৈশিষ্ট্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pithe Puli Makar Sankranti Books
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE