হোমের বিরুদ্ধে আগে থেকে ভুরি ভুরি অভিযোগ ছিলই। গত এপ্রিল মাসে খড়্গপুরে প্রশাসনিক সভাতেও এই হোম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার ডেবরার সেই হোম থেকেই নিখোঁজ হয়ে গেল তিন কিশোর। শুক্রবার রাতে হোমের জানলার লোহার রড কেটে তারা পালায় বলে অভিযোগ।
ডেবরার চককুমারে শিশুকিশোর (বালক) নামে এই হোম পরিচালনা করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের অধীনে চলা এই হোমে অনাথ গৃহহীন শিশু-কিশোরদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও এই হোমে শিশুদের মারধর, নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। ২০১২ সালে হোমের কাছেই মাটি খুঁড়ে আফতাব নামে এক শিশুর কঙ্কাল উদ্ধার হয়। ওই হোমেই থাকত আফতাব। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে হোমে সব্যসাচী মাইতি নামে এক কিশোরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ায় উত্তেজনা ছড়ায়। তারপরেও হোমের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
শুক্রবার রাতে হোম থেকে জিতু সিংহ, সনু নায়েক ও মিমু ঘোষ নামে তিন আবাসিক পালায় বলে অভিযোগ। ২০১১ সালে ডেবরার হোমে আসে বছর ষোলোর জিতু। বছর তেরোর সনুকে ২০১৪ সালে এই হোমে পাঠানো হয়। বছর সতেরোর মিমু ঘোষ ২০১৫ সাল থেকে ডেবরার হোমে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রেল পুলিশ এই তিনজন পথশিশুকে উদ্ধার করে। সমাজকল্যাণ দফতরের মাধ্যমে তারা ডেবরার এই হোমে আসে।
হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, হোমের কোনও আবাসিক তার বাড়ির এলাকা বলতে পারলে তাকে সেই এলাকার হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ওই হোম থেকে দশ জন শিশুকে ঝাড়খণ্ড সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জিতু জানিয়েছিল, তারও বাড়ি ঝাড়খণ্ডের জয়পুরে। তাই হোম কর্তৃপক্ষের অনুমান, জিতু বাড়ি ফিরতে না পারায় অন্য দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে সে পালিয়ে থাকতে পারে। ঘটনায় ডেবরা থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। হোমের সম্পাদক ত্রিদীপ দাসবেরার দাবি, “ওই তিন জনই পথশিশু। ওরা রাতে জানালার রড কেটে পালিয়ে গিয়েছে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওঁরা বাড়ি ফিরতে না পারার কারণে পালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’
তৃণমূলের ডেবরা ব্লক নেতা রতন দে-র অভিযোগ, “আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য বহুবার আলোচনায় বসতে চেয়েছি। কিন্তু হোম সম্পাদক বেপরোয়া।” যদিও হোমের সম্পাদক ত্রিদীপবাবু বলছেন, “নজরদারি চলেই। কিন্তু রাতের অন্ধকারে কে কী করছে তা বোঝা যায় না। তবে আরও সচেতন হতে হবে।” এ বিষয়ে জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির সভাপতি মৌ রায় বলেন, “আমি দায়িত্বে আসার পরে তদন্ত করে ওই হোম সম্পর্কে অনিয়ম পাইনি। পুলিশ ও হোমের লোকেরা ওই তিন কিশোরের খোঁজ করছে। তবে এটা ঠিক হোমে নজরদারিতে গাফিলতি ছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy