অনাদরে: পাথরার বহু মন্দিরেরই এখন জীর্ণ দশা। নিজস্ব চিত্র
গা ঘেঁষে বইছে কংসাবতী। নদীর পাশে পর পর প্রাচীন মন্দির। গায়ে নিখুঁত টেরাকোটার কাজ। যদিও পরিকাঠামো গড়ে না ওঠায় পর্যটনে পিছিয়েই মন্দিরময় পাথরা। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ বার সাজবে পাথরা। হবে পার্ক, নজর মিনার (ওয়াচ টাওয়ার)। পাথরায় পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনাও হয়ে গিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের একটি দল পাথরা পরিদর্শন করে গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা আধিকারিক সুমন্ত রায়ের নেতৃত্বে দিন কয়েক আগেই দলটি পাথরায় যায়। পর্যটনের প্রসারে কী কী করা যায় সেই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখা হয়। ছিলেন ইয়াসিন পাঠানও। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “পর্যটনের প্রসারে বেশ কিছু কাজ পাথরায় হবে। ওখানে পার্ক-ওয়াচ টাওয়ার তৈরির পরিকল্পনাও করা হয়েছে।”
মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে পাথরাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়তে রাজ্য সরকারের কাছে আগেই প্রস্তাব পাঠিয়েছিল জেলা প্রশাসন। প্রস্তাব খতিয়ে দেখে অর্থ বরাদ্দের আর্জিও জানানো হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এ নিয়ে পর্যটন সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। কিছুদিন পরে অবশ্য সব ধামাচাপা পড়ে যায়।
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছেন খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায়। পাথরা খড়্গপুর গ্রামীণ বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত। দিন কয়েক আগে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পাথরা সাজানোর আর্জি জানান দীনেনবাবু।। এও জানান, জেলা থেকে আগেই এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অথচ, এখনও সে ভাবে কিছু হয়নি। বিধায়কের আর্জি শুনে তখনই পাথরা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন জেলার প্রস্তাবে এখনও সে ভাবে কিছু হয়নি তা নিয়ে খোঁজ নেন। তারপরেই দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন তিনি।
এরপরই ফের ফাইল নাড়াচাড়া শুরু হয়। রাজ্য ফের জেলার কাছে প্রস্তাব চেয়ে পাঠায়। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পাথরার পর্যটন উন্নয়নে প্রায় দু’কোটি টাকা বরাদ্দ হতে পারে। সেই মতোই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। বিধায়ক দীনেনবাবু বলছিলেন, “পাথরাকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হলে পর্যটনেরই প্রসার হবে। এটা সম্প্রীতির একটা ক্ষেত্রও। মুখ্যমন্ত্রীকে সেই কথাই বলেছিলাম। ওখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সব রকম চেষ্টা চলছে।’’
পাথরা মানেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্যের পীঠস্থান। পাথরা মানেই ইয়াসিন পাঠান। কংসাবতীর তীরে অবস্থিত ৩৪টি মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন ২৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ (এএসআই)। সেটা ২০০৩ সাল। পরে ১৯টি মন্দির সংস্কার হয়। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই মন্দির সংস্কার হয়। যদিও পাথরায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। পাথরা সেজে উঠবে শুনে খুশি জেলার মানুষও। মেদিনীপুরের নমিতা সামন্তের কথায়, “পাথরায় ঘুরে এসেছি। কত প্রাচীন মন্দির। দারুণ সৌন্দর্য্য। পাথরা সেজে উঠলে অবশ্যই পর্যটকদের সুবিধা হবে। বছরভর পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে।”
ইয়াসিন পাঠানও বলছিলেন, “কংসাবতীর তীরে অপরূপ প্রকৃতির মাঝে প্রাচীন সব মন্দির। এই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র হতেই পারে। এতদিনে পর্যটন মানচিত্রে পাথরা জায়গা পেতে চলেছে। আমি খুব খুশি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy