Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নামেই স্বাস্থ্যজেলা, পরিষেবা তলানিতে

হাসপাতালই রুগ্ণ, রোগ সারাবে কে!

২০১১ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাকে স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে দু’ভাগ করা হয়। একটি নন্দীগ্রাম, অন্যটি পূর্ব মেদিনীপুর। হলদিয়া অন্তর্ভুক্ত হয় পূর্ব মেদিনীপুরের। তার পরেও চিকিৎসার হাল ফেরেনি শিল্পশহরে।

অমানবিক: এমন পরিবেশেই নাকি চিকিৎসা হয়। নিজস্ব চিত্র

অমানবিক: এমন পরিবেশেই নাকি চিকিৎসা হয়। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫৫
Share: Save:

নামে স্বাস্থ্যজেলা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল মোটেই সে কথা বলছে না পূর্ব মেদিনীপুরে।

এক রবিবার হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছে দেখা গেল ছুটির মেজাজ। ছুটিতে রয়েছেন হাসপাতালের সুপার, ওয়ার্ড মাস্টার। জরুরি বিভাগে রোগীদের দেখার জন্য রয়েছেন এক জন মাত্র চিকিৎসক ও কয়েক জন নার্স। ভাঙা মরচে পড়া শয্যায় শুয়ে রোগী। চারপাশে নোংরা, তারই মধ্যে দুপুরের খাওয়া দাওয়া সারছেন রোগীরা। অপরিচ্ছন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিড়াল।

২০১১ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাকে স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে দু’ভাগ করা হয়। একটি নন্দীগ্রাম, অন্যটি পূর্ব মেদিনীপুর। হলদিয়া অন্তর্ভুক্ত হয় পূর্ব মেদিনীপুরের। তার পরেও চিকিৎসার হাল ফেরেনি শিল্পশহরে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ইদানীং জেলায় জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় চাপ বেড়েছে এই হাসপাতালের উপর। কিন্তু রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় অনেক রোগীকেই অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে। অনেককে আবার রেফার করে দিচ্ছে হাসপাতালই। সুপার সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, “জ্বর নিয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন। প্রয়োজন বুঝে তাদের রক্তের নমুনা তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।” যদিও এক নার্সের কথায়, “আমরা সাধ্য মতো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে মানুষ আশ্বস্ত হতেন।” হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “এখানে অবিলম্বে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।” হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা পার্বতী দেবনাথ, মিঠু ঘোড়ই, গোষ্ঠ সাউদের দাবি, শহরের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজা হোক।

হলদিয়া টাউনশিপে বসবাসকারী পঞ্চাশ হাজার মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা বলতে মহকুমা হাসপাতাল ও পুরসভার কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দু’টি শিল্পসংস্থার হাসপাতাল থাকলেও সেখানে বাইরের কারও চিকিৎসার সুযোগ কার্যত মেলে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, ছোটখাটো অসুখে সামাল দিতে পারলেও পুর এলাকার ২৯টি ওয়ার্ডের মানুষকে সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে পারে না তারা। এর মধ্যে টাউনশিপের ৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অবস্থা শোচনীয়।

বেশি রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ছুটতে হয় ১৫ কিলোমিটার দূরের দুর্গাচক হাসপাতালে। কারণ সে সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসক থাকেন না। এ দিকে রাত ৯টার পর গাড়ি পাওয়াও সমস্যা। এ দিকে, টাউনশিপে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও নেই। কিছু দিন আগে বনলতা আবাসনের বাসিন্দা বছর চল্লিশের যুবক মলয় প্রধান হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। গাড়ি জোগাড় করে দুর্গাচক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু আধুনিক যন্ত্র বসলেও পরিকাঠামো ও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়েরা। সে কারণেই টাউনশিপের মানুষের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দাবিটি জোরাল হচ্ছে।

হলদিয়া নাগরিক কমিটির সম্পাদক অসিত শতপথী জানান, টাউনশিপের মানুষের সবচেয়ে বড় দাবি হল একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এক শিল্পসংস্থার কর্মী দেবব্রত মহাপাত্র বলেন, “হলদিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া সার কারখানার একটি হাসপাতাল ছিল। সেটি ভগ্নদশায় পড়ে রয়েছে। সেটি মেরামত করে চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করা যায়।”

পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় স্বাস্থ্য দফতরের হয়ে সচেতনতামূলক প্রচার করেন জাদুকর বৈদ্যনাথ ঘোষ। তাঁর কথায়, “জেলার বিভিন্ন প্রান্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির হাল ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে। হলদিয়াতেই সব থেকে অবহেলিত হল স্বাস্থ্য পরিষেবা। স্কুলশিক্ষক অলোকেশ সাহু বলেন, “বৃদ্ধ বাবা-মা হলদিয়ায় এলেই ভয়ে থাকি। বেশি রাতে সামান্য ইঞ্জেকশন দেওয়ারও লোক খুঁজে পাওয়া যায় না।”

হলদিয়ার মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু নস্কর বললেন, “মহকুমা হাসপাতাল তো একটিই থাকবে। তবে হ্যাঁ তার মানোন্নয়ন করা দরকার। সে কাজ করা হচ্ছে। তা ছাড়া, টাউনশিপ এলাকায় পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রও রয়েছে।”

হলদিয়ার পুরপারিষদ (স্বাস্থ্য) আজিজুর রহমানের দাবি, “২২ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ২৭, ২৮, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার কোনও জমি নেই। বন্দর প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় উন্নয়নের কাজ করা যায়নি।” তবে তাঁর বক্তব্য, আগামী দিনে টাউনশিপে উন্নত মানের স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Sub divisional Hospital Doctor Patients
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE