যন্ত্রে চলছে কাজু প্রসেসিং। কাঁথির একটি কারখানায়। নিজস্ব চিত্র
বাজেটে কাজুর দাম কমেছে। এতে ক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটলেও, রাজ্যে কাজু চাষের জন্য বিখ্যাত কাঁথি, মাজনা ও রামনগরের কাজু শিল্প গভীর সঙ্কটে পড়েছে। রীতিমতো মাথায় হাত এই সব এলাকার কাজু প্রসেসিং ইউনিটগুলির। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে ইতিমধ্যে বৈঠকেও বসেছে কন্টাই কাজু ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এবং বেঙ্গল কাজু অ্যাসোসিয়েশন।
সাধারণ ভাবে যে কাজু বাজারে বিক্রি হয় তার লম্বা প্রসেসিং পদ্ধতি রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, মাজনা, তাজপুর, রামনগর, দেপাল এলাকায় প্রায় আটশ কাজু প্রসেসিং ইউনিট রয়েছে। এতো ইউনিটের জন্য যে পরিমাণ কাঁচা কাজু দরকার হয়, সেই পরিমাণ কাজু রাজ্যে উৎপাদিত হয় না। কারণ, বহু জায়গায় বালিয়াড়ি ও কাজু জঙ্গল কেটে সাফ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে কাঁচা কাজুর জন্য ভিন রাজ্য ও বিদেশের উপর নির্ভর করতে হয় এখানকার কাজু প্রসেসিং ইউনিটগুলিকে।
স্থানীয় কাজু ব্যবসায়ীমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁচা কাজু আনার পর তার উপরের মোটা খোলা ছাড়ানো হয়। অর্থাৎ কাজু ভাঙা হয়। এরপর কাঁচা কাজুর উপর থেকে যাওয়া পাতলা খোসা ছাড়ানো হয় মেশিনের সাহায্যে। এর পর প্রসেসিং হয়ে তা বাজারে বিক্রির জন্য প্যাকেটবন্দি করা হয়। কাঁথি, মাজনা ও তাজপুরের কাজু ইউনিটগুলির দাবি পাশের রাজ্য ওডিশায় কাজু জঙ্গল সাফ করে বিভিন্ন প্রকল্প হচ্ছে। ফলে অন্ধ্র, কেরল, অসম ও ত্রিপুরা থেকে কাঁচা কাজু আসে এ রাজ্যে। দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি কাজু উৎপাদন হয়। কিন্তু সেখানকার ব্যবসায়ীরা রাজ্যের বাইরে কাঁচা কাজু রফতানিতে আগ্রহী নন। রাজ্যেই তার প্রসেসিং হয়। বিদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কাঁচা কাজু আসে কাঁথির কাজু শিল্পে। তাইল্যান্ড, আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, হংকং, চিন, সিঙ্গাপুর থেকে কাঁথি মহকুমায় কোটি কোটি টাকার কাঁচা কাজু আমদানি হয়।
বেঙ্গল কাজু অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মলয় সামন্ত বলেন, “এখানে কাজুর দাম কমেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা কাজুর শুল্ক আরও বেড়েছে। ফলে বেশি দাম দিয়ে আগে থেকে কাঁচা কাজু কিনেছেন বা অগ্রিম বুকিং করেছেন কাঁথির কাজু ইউনিটগুলি। ফলে দেশে হঠাৎ কাজুর দাম কমায় বিরাট অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছে রাজ্যের কাজু ইউনিটগুলি।’’ তাঁর আরও দাবি, “বিদেশ থেকে কাঁচা কাজু কেনার সময় নগদ টাকায় কিনতে হয়। কিন্তু প্রসেসিংয়ের পর কাজু বাজারে ধারে বিক্রি করতে হয়।’’
বেঙ্গল কাজু অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় আটশ ইউনিট সদস্য রয়েছেন। কিন্তু কাজুর দাম কমার ঘোষণার পর প্রায় তিনশ ইউনিট সদস্য সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করাননি। তাঁরা এখন গভীর সঙ্কটে পড়েছেন। মাজনার এক কাজু ইউনিটের কর্ণধার অনন্ত বেজ বলেন, “যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে কাজু ইউনিটগুলি বন্ধ হওয়ার মুখে। এই অবস্থায়, রাজ্যে কাজু শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত প্রায় এক লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’’
কাঁচা কাজুর খোসা ছাড়ানোর কাজে যুক্ত কাঁথি মহকুমার বহু গ্রামের মহিলারা। তেমনই একজন দারুয়া গ্রামের ফতেমা বিবি বলেন, “আমরা কাজুর পরিমাণের উপর দাম পাই। সেই দাম বাড়াতে বলেছিলাম কাজু প্রসেসিং ইউনিটগুলিকে। কিন্তু কাজুর দাম কমায়, তারা টাকা বাড়াতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে অনেকেই আর কাজ করতে চাইছেন না।’’ রামনগরের এক গৃহবধূ অনিমা পাত্র বলেন, ‘‘দাম কমার ফলে এলাকার বেশ কিছু কাজু প্রসেসিং ইউনিট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই সব ইউনিটে অনেক মহিলা কাজ করতেন। তাঁদের এখন কাজ নেই।’’
গত কাল থেকে মন্দারমণিতে কাজুশিল্প নিয়ে তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার শুরু হয়েছে। সেখানে রাজ্যের কাজু শিল্পে এ হেন সমস্যা তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন কাঁথির কাজু ব্যবসায়ীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy