কল খুললেই পড়ছে ঘোলা জল। অপরিষ্কার জল আসার অভিযোগ উঠতেই নড়েচড়ে বসল খড়্গপুর পুরসভা। বৃহস্পতিবার জল বিষয়ক পুর-পারিষদ তৈমুর আলি খানের নেতৃত্বে পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা শহরের বিভিন্ন জলাধার ও পাইপলাইনের অবস্থা খতিয়ে দেখেন। প্রায় প্রতিটি এলাকা থেকেই কালো জলের নমুনা মিলেছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। তবে কালো জলের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি পুর ইঞ্জিনিয়াররা।
প্রতি বছর গ্রীষ্মে রেলশহরে জলের আকাল নতুন কিছু নয়। পুরসভা দাবি করেছিল, দ্বিতীয় জলপ্রকল্প চালু হলেই জলসঙ্কট মিটবে। যদিও গত বছর জুন মাসে দ্বিতীয় জলপ্রকল্প চালু হওয়ায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় নোংরা জল সরবরাহের অভিযোগ তোলেন শহরের বাসিন্দারা। বছর ঘুরলেও শহরের ইন্দা, রাজগ্রাম, মালঞ্চ, ঝাপেটাপুর, পুরাতনবাজার, তালবাগিচা, রথতলা এলাকায় ঘোলা জল পড়ছে বলে অভিযোগ। বিগত কয়েক মাস ধরে টানা এই বিষয়ে পুরসভায় অভিযোগ জানিয়ে আসছেন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্মৃতিকণা দেবনাথ। তারপরেও অবশ্য সমস্যার সমাধান হয়নি।
ঘোলা জল আসায় এ বছর শীতেও জলের আকাল দেখা দিয়েছিল শহরে। গরম পড়তেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ইন্দার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অপর্ণা ঘোষ বলেন, “আমাদের ওয়ার্ডে মাস খানেক ধরেই কালো জল পড়ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ডিপ টিউবওয়েল থেকে সরবরাহ হওয়া জলে সমস্যা হচ্ছে। পরে দেখলাম নদী থেকে যে জল আসছে সেটাও কালো। এলাকার মানুষ আমার কাছে রোজ অভিযোগ করছেন।” শহরের পুরাতনবাজার এলাকার বাসিন্দা মানস পাল বলছেন, “মাস তিনেক ধরেই কালো জল আসছে। আমরা প্রতিটি কলের মুখে কাপড় লাগিয়ে জল নিই। ওই জল পান করতে রীতিমতো ভয় লাগছে।”
কংসাবতী নদী থেকে জল তুলে পরিশোধন করে খড়্গপুর শহরে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ডিপ-টিউবওয়েল থেকেও পানীয় জল সরবরাহ হয়। শহরের অনেক জায়গায় নদীর পরিশোধিত জলের সঙ্গে ডিপ-টিউবওয়েলের জল মিশিয়েও সরবরাহ করা হয়। ফলে ঠিক কোন উৎস থেকে পানীয় জলে নোংরা মিশছে তা নিয়ে এখনও বিশেষ কিছু জানা যায়নি বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন জল প্রকল্পে নদী থেকে তোলা জল পরিশোধনের পর কেশপাল ও ঝরিয়ার যে ট্যাঙ্কে জমা হচ্ছে, সেখানেও কালো ছাইয়ের মতো পদার্থ দেখা গিয়েছে। পুর প্রতিনিধিদের ধারণা, নতুন জলপ্রকল্পে কোনও সমস্যার দরুন নদী থেকে ঘোলা জল উঠছে। এ দিন জল বিষয়ক পুর পারিষদ তৈমুর আলি খান বলেন, “আমরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাটির নিচে থাকা জলের ট্যাঙ্কের পাশাপাশি কেশপাল ও ঝরিয়া নতুন জলপ্রকল্পের ট্যাঙ্কও দেখেছি। সেখানেও কালো জল রয়েছে। কিন্তু কীভাবে ওই কালো জল নদী থেকে আসছে তা বোঝা যাচ্ছে না।”
আগামী সোমবার ওই সমস্ত এলাকায় ফের পরিদর্শনে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। তিনি বলেন, “শহরে কয়েকটি এলাকায় কালো জল আসছে বলে অভিযোগ এসেছে। আমরা কোনও ঝুঁকি না নিয়ে পুরসভার প্রতিনিধিদের অভিযানে পাঠিয়েছিলাম। সমস্যার সূত্র এখনও বোঝা যায়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজে ফের পরিদর্শনে যাব। গরমে যাতে শহরে জলকষ্ট না হয় সে জন্য আমরা সবরকম চেষ্টা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy