অপরিষ্কার: এমনই ঘোলা জল মিলছে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালবাগিচায়। নিজস্ব চিত্র
প্রতি বছর গরমে জলসঙ্কটে ভোগেন খড়্গপুরবাসী। তবে শীতে সমস্যা কেটে যায়। কিন্তু এ বার শীতকালেও জলের সমস্যায় জেরবার রেলশহরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘোলা জল সরবরাহ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
বহু প্রতীক্ষার পরে গত জুনে খড়্গপুর শহরে চালু হয়েছে দ্বিতীয় জলপ্রকল্প। তারপর শহরবাসীর আশা ছিল জলসঙ্কট কাটবে। তবে এখনও শহরে দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের জন্য কাঁসাই নদী সংলগ্ন কেশপাল থেকে ঝরিয়া পর্যন্ত পাইপ লাইন বসানো যায়নি। ফলে প্রথম জলপ্রকল্পের পাইপ লাইন দিয়েই আসছে দ্বিতীয় প্রকল্পের জল। কিন্তু ওই জল প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকেই শহর জুড়ে ঘোলা জল সরবরাহ হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলছে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিদিন দু’বেলা যে জল সরবরাহ করা হচ্ছে তা নোংরা ও ঘোলা। আবার বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রথম পর্যায়ে ঘোলা জল এলেও পরে স্বচ্ছ জল পাচ্ছে শহরবাসী। তবে লৌহমিশ্রিত জল সরবরাহ হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে বহুবার পুরসভাকে জানানো হলেও কোনও সুফল মেলেনি বলে অভিযোগ। এমনকী কী কারণে এমন ঘোলা জল আসছে তাও স্পষ্ট হয়নি। কিন্তু এভাবে শীতেও ঘোলা জলের সমস্যায় ক্ষোভ বাড়ছে শহরবাসীর।
শহরে জলসঙ্কট দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রথম জলপ্রকল্পের পরে ক্রমেই চাহিদা বাড়তে থাকায় গত ২০১০ সালে দ্বিতীয় একটি প্রকল্প গড়ার কাজ শুরু হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলছিল নানা টালবাহানা। তার পরে চলতি বছরের জুনে তড়িঘড়ি এই দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের উদ্বোধন হয়। তবে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় সংযুক্ত করা হয়নি দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের পাইপ লাইন। সেই সঙ্গে কাঁসাই নদী থেকে শহরে ওই প্রকল্পের যে জল আসছে তা পুরনো প্রকল্পের পাইপ লাইনে আসছে। তবে উদ্বোধনের আগে-পরে কয়েকদিন পরীক্ষামূলকভাবে জল সরবরাহ হওয়ায় শহরের ইন্দা থেকে তালবাগিচা পর্যন্ত কয়েকটি ওয়ার্ডে নোংরা জল আসছিল। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘোলা জল আসছে বলে অভিযোগ উঠছে। বিশেষ করে শহরের তালবাগিচা, ইন্দা, সোনামুখি, বুলবুলচটি এলাকায় জল পরিস্রুত নয় বলে অভিযোগ। শহরের ইন্দার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অন্তরা আচার্য বলেন, “আমাদের বাড়িতে যে জল সরবরাহ হয় গত কয়েকমাস ধরে দেখছি প্রথম পর্যায়ে নোংরা জল আসছে। বোতলে ওই জল রাখলে বোতল লাল হয়ে যাচ্ছে। কী কারন কেউ বলতে পারছে না। আমরা এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বাড়িতে ওয়াটার পিউরিফায়ার বসিয়েছি।” আবার শহরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালবাগিচার বাসিন্দা নিভা পাল বলেন, “দ্বিতীয় জলপ্রকল্প চালুর পর থেকেই আমাদের এলাকায় ঘোলা জল আসছে। সারা বছর আমাদের ওয়ার্ডে জলসঙ্কটে কাটাতে হয়। এখন শীতেও ঘোলা জলের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। পুরসভাকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি।”
পুর প্রতিনিধিদের কাছেও এর কোনও সদুত্তর নেই। তাই এলাকাবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে কাউন্সিলরদের। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্মৃতিকণা দেবনাথ বলেন, “স্থানীয় মানুষ বারবার অভিযোগ করছেন, ঘোলা জল পাচ্ছে। তাই স্থানীয় মানুষকে পুরসভায় নিয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। কিন্তু পুরসভা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়নি। বলেছে আমাদের ওয়ার্ডের বোরিং বিকল। কিন্তু বোরিং বন্ধ করেও দেখেছি ঘোলা জল পড়ছে। আমার ধারণা দ্বিতীয় জল প্রকল্পের জল ঘোলা আসছে।” যদিও পুর পারিষদ (জল) তৈমুর আলি খানের দাবি, “আমাদের দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের জল একদম পরিষ্কার আসছে। মনে স্থানীয় ভাবে কোথাও পাইপে নোংরা জল মিশে যাচ্ছে। বিষয়টি দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy