Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্লিচিং ছড়ালেন মহিলারাই

শনিবার দুপুরে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান খড়্গপুরের নিমপুরার বছর ছাব্বিশের প্রিয়াঙ্কা সাউ। তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন পরিজন ও স্থানীয় কাউন্সিলর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০৭:৩০
Share: Save:

এতদিন শহরবাসী ফুঁসছিলেন। এ বার ডেঙ্গি মোকাবিলায় তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব হলেন একাংশ তৃণমূল কর্মীও। ডেঙ্গিতে শহরের এক মহিলার মৃত্যুর পরে কাউন্সিলরের পদত্যাগ দাবি করে পোস্টার পর্যন্ত পড়েছে। শহরবাসীর ক্ষোভ, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নাগরিকদের ঘাড়ে অসচেতনতার দায় চাপাচ্ছে পুরসভা।

শনিবার দুপুরে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান খড়্গপুরের নিমপুরার বছর ছাব্বিশের প্রিয়াঙ্কা সাউ। তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন পরিজন ও স্থানীয় কাউন্সিলর। প্রিয়াঙ্কার অক বছরের ছেলেও জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। প্রিয়াঙ্কার মৃত্যুর পরে এলাকাবাসীর অভিযোগ, মশা মারতে কিছুই করছে না পুরসভা। শেষে বাসিন্দারা নিজেরাই রাস্তায় নেমে ব্লিচিং ছড়িয়েছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সচেতনতা প্রচার শুরু করেছে পুরসভা। তারপরে অবশ্য এ দিনও শহরের বিভিন্ন এলাকায় আবর্জনা, নোংরা জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে। ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৪, ১৯, ২৩, ২৪, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩৩, ৩৫-সহ প্রতিটি ওয়ার্ডেই দেখা যাচ্ছে অপরিচ্ছন্নতার ছবি। এমনকী খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বরও অপরিচ্ছন্ন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুরসভাকেও আরও সচেতন হতে হবে। এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আমরাও সর্বত্র নজর রাখছি।”

জেলার ১০০জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মধ্যে ৭৫জনই খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা। তার মধ্যে একজনের মৃত্যু উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে ডেঙ্গি বিরোধী অভিযান নিয়েও। সিপিএমের জোনাল সদস্য অনিল দাস বলেন, “শহরের কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য দফতর-পুরসভা এ সব চাপার চেষ্টা করছে। অভিযানের নামে শুধু মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছে।” অবস্থা দেখে এলাকাবাসী পথে নেমেছেন। এ দিন বুলবুলচটিতে এলাকার মহিলারা ব্লিচিং ছড়িয়েছেন।

শহরে সব থেকে বেশি ডেঙ্গি রোগী দেখা যাচ্ছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুমা ঘোষ বর্মন বলেন, “আমি, আমার শ্বাশুড়ি, স্বামী সকলে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে রেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। অথচ পুরসভার পক্ষ থেকে একটুও মশা মারার তেল, ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে না। চারদিকে আবর্জনা জমছে।”যদিও পুরসভার দাবি, এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে সব রকম চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হওয়ায় বাড়ির ভিতরে জমা জলে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে। যে এলাকার মহিলা মারা গিয়েছেন, সেই ১২নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সরিতা ঝা-রও দাবি, “আমি আমার এলাকা যথেষ্ট পরিষ্কার রেখেছি। লোকে যদিও বাড়িতে জঙ্গল, জমা জল রেখে দিচ্ছে।’’ তাঁর পদত্যাগের দাবিতে পোস্টার পড়া নিয়ে সরিতাদেবীর ব্যাখ্যা, ‘‘এই পোস্টার সাধারণ মানুষ নয়, বিরোধীরা দিয়েছে।” যদিও ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা রাজকুমার দাস নিজেই বলছেন, “এলাকা একেবারে অপরিচ্ছন্ন। কাউন্সিলর সিপিএম থেকে আমাদের দলে এসেছে। কিন্তু এখনও সিপিএমের কথা মতো চলছেন।” স্থানীয় বাসিন্দা ব্যাঙ্ককর্মী অজিত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “ডেঙ্গি রোধে এখনও উল্লেখযোগ্য কিছু চোখে পড়ছে না।”

পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী কংগ্রেসের রীতা শর্মা এ দিন ফোন ধরেননি। তবে সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “৩১ অগস্ট পুরসভায় স্মারকলিপি দেব।” আর বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “যে ভাবে ডেঙ্গির বিরুদ্ধে পথে নামা উচিত তা হচ্ছে না। আমি বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women bleaching powder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE