প্রতীকী ছবি।
জেলা হাসপাতালে অসুস্থ সদ্যোজাত শিশুদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র বা এসএনসিইউতে এক দিনে ৫ শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। সেই তদন্তে কোনও গাফিলতি পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে হাসপাতাল চিকিৎসকের একটা অংশ প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের পাল্টা দাবি, পাঁচ শিশু এমনিই মারা গেল! এটা হয় নাকি? মৃত্যুর পিছনে যে কোনও গাফিলতি নেই সেটা কী ভাবে এমন নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে? ১০ অক্টোবর জেলা সদর হাসপাতালে এসএনসিইউয়ে মৃত্যু হয় পাঁচ শিশুর। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘মৃত্যুটা যে কারণেই হোক না কেন, সেটা আমাদের খুঁজে বের করা দরকার। এক দিনে পাঁচ জন সদ্যোজাতের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়।”
বিষয়টি সামনে আসার পরেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক এবং নার্সদের কাছে লিখিত ভাবে শিশু মৃত্যুর কারণ জানতে চাওয়া হয়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন তিনি। সেই মতো জেলার ডিএমসিএইচও শাশ্বত মণ্ডলের নেতৃত্বে জেলা হাসপাতালের সুপার, এক জন শিশু বিশেষজ্ঞ ও এক জন চিকিৎসককে নিয়ে তৈরি করা হয় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি।
হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের দাবি, ‘‘তদন্তে গাফিলতি উঠে আসেনি।” তা হলে এক দিনে পাঁচ শিশু মারা গেল কী ভাবে? সুপার বলেন, ‘‘প্রত্যেক শিশুর মৃত্যুর পিছনে আলাদা আলাদা কারণ আছে। সেটা আমরা রিপোর্টে উল্লেখ করেছি।’’
সদর হাসপাতালে এসএনসিইউয়ে ১৮টি শয্যা আছে। সেখানে অসস্থ সদ্যোজাতদের চিকিৎসা করা হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, এই পাঁচ বাচ্চার মধ্যে জন্মানোর সময় এক জনের ওজন ছিল আটশো গ্রাম। আর এক জনের ওজন ছিল প্রায় এক কেজি। এমন নবজাতককে বাঁচানো অত্যন্ত কঠিন বলেই দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তদন্তরিপোর্ট অনুযায়ী, আর এক শিশুর ওজন ছিল আড়াই কেজি। সেই শিশু চাপড়ার একটি নার্সিংহোমে জন্মেছিল নানা জটিলতা নিয়ে। দু’দিন পরে একেবারে শেষ মুহূর্তে জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আর এক প্রসূতির জেলা হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব হয়। মা ও বাচ্চা সুস্থ হওয়ার পরে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ছ’দিন পরে শিশুটি অসুস্থ হয়। তাকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। কালীগঞ্জের শিশুর ওজন ছিল ২ কেজি ৭৭ গ্রাম। সে জন্মের পর থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তাকেও বাঁচানো যায়নি। ভীমপুরে সদ্যোজাতের ওজন ছিল ২ কেজি ৭৫ গ্রাম। জন্মানোর দু’দিন পরে শিশুটি অসুস্থ হয়। তাকে এসএনসিইউতে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। তদন্তে জানানো হয়, আগে শিশুটির শরীরে তেমন অসুস্থতা ধরা পরেনি। সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘‘এমন হতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে ‘সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম’ বলে। এর কারণ ব্যাখ্যা সম্ভব হয় না।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “স্বাস্থ্য ভবন থেকে যে নির্দেশ আসবে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy