শীতের চেনা ছবি। নিজস্ব চিত্র
কনকনে শীতের হাত থেকে বাঁচতে ভরসা যে আগুন, অসাবধানে তা-ই বিপদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মহিলাদের।
আগুন পোহাতে গিয়ে পাঁচ দিনে নদিয়ার করিমপুরে নানা এলাকায় পাঁচ মহিলা দগ্ধ হয়েছেন। বিপদ বুঝে সতর্কতামূলক প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে করিমপুর ১ ও ২ ব্লক প্রশাসন। বুধবার ব্লকের সব গ্রাম পঞ্চায়েতকে প্রচার চালাতে বলা হয়েছে। গত শনিবার সকালে মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙায় সত্তর ছোঁয়া আশালতা সাহা বাড়িতে নারকেল পাতায় আগুন জ্বালিয়ে হাত-পা সেঁকছিলেন। সেই সময়েই কাপড়ে আগুন লাগে। তাঁর কোমরের নীচের অংশ পুড়ে যায়। সোমবার সকালে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হন থানারপাড়ার ধোড়াদহের বছর কুড়ির বিশাখা হালদার ও করিমপুরের চায়না মণ্ডল। দু’জনেরই কোমর থেকে পিছন দিকটা ঝলসে যায়।
মঙ্গলবার রাতে আগুনে হাত-পা সেঁকতে গিয়ে দগ্ধ হন কেচুয়াডাঙার বছর আঠারোর বেদানা বিবি। তাঁকে রাতেই করিমপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালেই আবার ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন হোগলবেড়িয়ার আয়াডাঙার রোশনা মণ্ডল। সকলেই এখন চিকিৎসাধীন।
একই ভাবে আগুন পোহাতে গিয়ে কাপড়ে আগুন লেগে গিয়েছিল মুর্শিদাবাদের রানিনগরের বছর ষাটের এক বৃদ্ধার। উল্টো দিকে মুখ করে বসে সেঁক নিতে গিয়ে তাঁর কাপড়ে ধরে যায় আগুন। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
দিন সাতেক আগে ডোমকলের বঘারপুর রমনা গ্রামে পা সেঁকতে গিয়ে শাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছিল কাজলা বিবির। তাতে তাঁর পা ও কোমরের নীচের অংশ পুড়ে যায়। ডোমকল ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমর ঘোষ, ‘‘আগেও শীতের সময়ে এমন অনেক ঘটনা আমরা দেখেছি।’’
আসলে একে শীতবস্ত্রের অভাব। তার উপরে গাঁয়ের খোলা প্রান্তর জুড়ে জাঁকিয়ে বসা শীত। আগুনের ধারে গোল হয়ে বসে আড্ডা দেওয়াটা তাই বেশির ভাগ গাঁয়েরই চেনা ছবি। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে বিপদ ঘটছে সাধারণ শাড়ির আঁচল বা লুটোনো অংশ সামলাতে না পেরে।
করিমপুর ১-এর বিডিও সুরজিৎ ঘোষ এবং করিমপুর ২-এর বিডিও সত্যজিৎ কুমার বলেন, “গত ক’দিন ধরে প্রচণ্ড ঠান্ডা চলছে। মহিলারা বাধ্য হয়েই আগুন পোহাতে যাচ্ছেন। তখনই বিপত্তি ঘটছে। প্রতিটি গ্রামে এই নিয়ে প্রচার চালানোর পঞ্চায়েতগুলিকে লিখিত জানানো হয়েছে।” করিমপুর সিডিপিও মুকুল মিস্ত্রি জানান, দুই ব্লকের ছ’শো অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকাদেরও বলা হয়েছে প্রচারে নামতে। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক শিবময় সিংহ রায়ের মতে, “এক সঙ্গে অন্তত চার জন, আগুন থেকে একটু তফাতে পোশাক সামলে বসা উচিত। যাতে পোশাকে আগুন লাগলে অন্য দেখতে পায়। দুর্ঘটনা ঘটলে সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।’’
আগুন পোহান, কিন্তু সাবধানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy