Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বিয়েতে না, পড়তে চেয়ে ঘরছুট কন্যা

বুধবার দুপুরে বড়ঞার বিডিও রুডেন শেরিং লামা তাঁকে আশ্বস্ত করেন, ‘‘বইপত্র সব বাড়ি থেকে আনার ব্যবস্থা করা হবে। জোর করে তোমার কেউ বিয়ে দিতেও পারবে না। আমরা তোমার সঙ্গে আছি।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কৌশিক সাহা ও প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
বড়ঞা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৬
Share: Save:

হন্তদন্ত হয়ে মেয়েটি সটান ঢুকে পড়েছিল বিডিও-র ঘরে। হাঁফাতে হাঁফাতে সে বলে, ‘‘বইগুলো বাড়িতে আছে। আপনি দয়া করে সেগুলো আনার ব্যবস্থা করে দিন, স্যর।’’

বুধবার দুপুরে বড়ঞার বিডিও রুডেন শেরিং লামা তাঁকে আশ্বস্ত করেন, ‘‘বইপত্র সব বাড়ি থেকে আনার ব্যবস্থা করা হবে। জোর করে তোমার কেউ বিয়ে দিতেও পারবে না। আমরা তোমার সঙ্গে আছি।’’

বুধবার দুপুরে বিডিও-র ঘরে বছর সতেরোর মিলি ঘোষ যেন পায়ের তলায় মাটি পায়। পাঁচথুপি শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী বিডিওকে বলেছে, ‘‘বিশ্বাস করুন, আমি পড়তে চাই। কিন্তু কেউ কথা শুনছে না।’’

অভিযোগ, তার কাছ থেকে বই কেড়ে নেওয়া হয়েছে বারবার। পড়ার শাস্তি হিসেবে মারধরও কম জোটেনি। তার পরেও মিলির সেই এক গোঁ, ‘‘তোমরা আমাকে মেরে ফেললেও বিয়ে করব না। মাধ্যমিক আমি দেবই।’’ এ দিকে বাড়ির লোকজনও একবগ্গা। নাবালিকা মেয়ের এত জেদ তারাও সহ্য করতে রাজি নয়। তাই মেয়ের মুখের সামনে থেকে বই ছুড়ে ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছে পাত্রের ছবি। তারা শাসিয়েছে, ‘‘এই ছেলের সঙ্গেই বিয়ে করতে হবে। লেখাপড়া ভুলে তার জন্য তৈরি হ।’’

মিলি তৈরি হয়েছিল। তবে বিয়ের জন্য নয়। এই পরিস্থিতির একটা হেস্তনেস্ত করতে চেয়েছিল সে। আর তাই সোমবার সে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল দিদার বাড়ি, ভরতপুর সরকারপা়ড়ায়। অভিযোগ, সেখানেও তার বাড়ির লোকজন ফোনে হুমকি দিচ্ছিল। তার পরেই মিলিকে সঙ্গে করে তার দিদা আরতি ঘোষ চলে যান পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামে।

মঙ্গলবার সেখানকার বিডিওকে তিনি লিখিত ভাবে জানান, তাঁর নাতনি নাবালিকা। এ বছর সে মাধ্যমিক দেবে। কিন্তু জোর করে তার বাড়ির লোকজন বিয়ে দিতে চাইছে। তার পরেই আউসগ্রাম ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বড়ঞার বিডিও-র সঙ্গে।

এ দিকে মিলি বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে তার বাবা সঞ্জয় ঘোষ বড়ঞা থানায় মেয়েকে কেউ বা কারা অপহরণ করেছে বলে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ দিন সেই সূত্রে মিলিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে থানায়। পুলিশ তার বাড়ি থেকে সব বইপত্রও নিয়ে এসেছে।

পূর্ব বর্ধমানের কন্যাশ্রী জেলা প্রকল্প আধিকারিক শারদ্যুতি চৌধুরী বলছেন, ‘‘মেয়েটি যাতে নির্বিঘ্নে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারে সহযোগিতা করব।’’

পুলিশ বাড়ি থেকে বইপত্র এনে দেওয়ায় খুশি মিলি। তার কথায়, ‘‘এর আগের বছরেই আমি মাধ্যমিক দিতাম। ওরা সব বইপত্র কেড়ে নিয়ে আমাকে পরীক্ষা দিতে দিল না। এ বারেও ওরা বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেছিল। আমিও বিচারককে বলব, দিদার কাছে থেকে আমি লেখাপড়া করতে চাই।’’ তবে ওই নাবালিকার দাদু ধীরু ঘোষ বলেন, ‘‘এ মেয়ে কারও কথা শোনে না। তাই বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School drop Education Child marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE