Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কন্যাশ্রীর টাকায় তৈরি হল শৌচাগার, ফুল দিল প্রশাসন

সাদামাটা দোচালা বাড়ির আটপৌরে উঠোনে হুড়মুড় করে গাড়ি ঢুকতে দেখে বেশ হকচকিয়ে গিয়েছিল কলেজ পড়ুয়া শাবানা ইয়াসমিন। তাঁর বাড়ির লোকেদের অবস্থাও তথৈবচ। কিছু বুঝে ওঠার আগে সাহেবি পোশাক পরা সরকারি অফিসাররা উঠোনে নেমে তাঁরই খোঁজ করছে শুনে প্রায় হতবাক ইয়াসমিন।

শৌচাগারের সামনে শাবানা। বৃহস্পতিবার রানিনগরে। নিজস্ব চিত্র

শৌচাগারের সামনে শাবানা। বৃহস্পতিবার রানিনগরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমকল শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৩
Share: Save:

সকাল হলেও কুয়াশা কেটে সুয্যিমামার দেখা তখনও মেলেনি। শীত-সকালে আড়মোড়া ভাঙছিল বাংলাদেশ সীমানা লাগোয়া গ্রাম শিবনগর।

সাদামাটা দোচালা বাড়ির আটপৌরে উঠোনে হুড়মুড় করে গাড়ি ঢুকতে দেখে বেশ হকচকিয়ে গিয়েছিল কলেজ পড়ুয়া শাবানা ইয়াসমিন। তাঁর বাড়ির লোকেদের অবস্থাও তথৈবচ। কিছু বুঝে ওঠার আগে সাহেবি পোশাক পরা সরকারি অফিসাররা উঠোনে নেমে তাঁরই খোঁজ করছে শুনে প্রায় হতবাক ইয়াসমিন।

তাঁর বিস্ময় কাটান ডোমকলের এসডিও তাহিরুজ্জামান আর রানিনগরের বিডিও আশিষ রায়। তাঁরা বলেন, ‘‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি যা কাজ করেছে, তা আমাদের কাছে খুবই গর্বের।’’ তখনও শাবানা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি করেছেন টা কী? এ বারে তাঁকে ভেঙে বলেন সরকারি আধিকারিকেরা। কন্যশ্রী প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকায় শাবানা বানিয়ে ফেলেছে আস্ত একটা শৌচাগার।

জেলাকে ‘নির্মল’ করতে হবে। তাই প্রত্যন্ত গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন সরকারি অফিসারেরা। গ্রামের মানুষকে বোঝাতে এই শীতে ঘাম ছুটছে তাঁদের। এমন এক সময়ে শাবানাদের মতো তরুণীরাই উদাহরণ হতে পারেন বলে মনে করছে প্রশাসন।

তবে শাবানার খবর জানা ছিল না প্রশাসনের। বাড়িতে শৌচাগার বানানোর জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে রানিনগরের কাতলামারি, শিবনগর এলাকায় প্রচারে বেরিয়েছিলেন ডোমকলের মহকুমা শাসক এবং রানিনগর ১ ব্লকের বিডিও-সহ অন্যান্য সরকারি কর্মীরা। যাঁরা ভোরবেলা মাঠে প্রাতঃকৃত করতে আসছেন, তাঁদের বোঝাচ্ছিলেন তাঁরা। তখন গ্রামেরই কয়েকজন তাঁদের ইয়াসমিনের কথা জানান।

শিবনগরের বাসিন্দা, স্কুলছাত্র ইকবাল শেখ বলেন, ‘‘বাবুরা অনেক কথা বলছিল। শাবানাদিদি যা করেছে, তা নিয়ে তো গ্রামে সাড়া পড়ে গিয়েছে। তা হলে ওদেরই বা জানাবো না কেন?’’ শাবানা নিজে বলছেন, ‘‘উচ্চশিক্ষার জন্য সরকার টাকাটা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু ওটা দিয়ে শৌচাগার না করলে আর কোনও দিন হয়ত শৌচাগার হত না বাড়িতে। শৌচাগার ছিল না বলে বাড়িতে বন্ধুদের আসতে বলতে পারতাম না লজ্জায়।’’ শাবানার কথা শোনার পরেই সরকারি কর্তারা সটান হাজির হন শাবানার বাড়িতে। তার আগে গাড়ি পাঠিয়ে স্থানীয় হাট থেকে ফুল আর বই কিনে আনা হয়। রীতিমতো সংবর্ধনা জানানো হয় ইসলামপুর আদর্শ মহাবিদ্যলয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী শাবানাকে। শাবানার বাবা আবু বাক্কার খেটে খাওয়া মানুষ। তার কথায়, ‘‘টাকাটা মেয়ের অ্যাকাউন্টে ঢোকার পর ভেবেছিলাম, মেয়েটার একটা গয়না বানাব। বিয়ের সময় কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। কিন্ত মেয়েটা জেদ ধরল শৌচাগার বানাতেই হবে। এখন মনে হচ্ছে, ওর কথায় রাজি হয়ে ভালই করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toilet Kanyashree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE