Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশে ভরসা নেই, বিরোধী দেখছে ‘জুজু’

নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘আমাদের আগেও কোনও চাপ ছিল না, এখনও নেই। মানুষ ওঁদের সঙ্গে নেই, তাই ওঁরা অলীক জুজু দেখছেন।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০১:২৬
Share: Save:

অনেক টানাপড়েনের পরে অবশেষে ভোট হচ্ছে কাল, সোমবার। বিরোধী প্রার্থী না থাকায় বহু জায়গাতেই ভোট হবে না। যেখানে হবে, সেখানেও ভোটারেরা বুথে যেতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে সন্দিহান বিরোধীরা।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘মনোনয়ন পর্ব থেকে তৃণমূল যা করেছে, তাতেই পরিষ্কার ভোটে কী ঘটতে পারে। এই নির্বাচনকে যাতে প্রহসনে পরিণত করা যায়, তার জন্য যা দরকার পুলিশ ও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা সেই বন্দোবস্ত করছে।’’

অর্থাৎ, পুলিশের প্রতিও যে ভরসা রাখতে পারছেন না বিরোধীরা, তা অধীরের কথায় পরিষ্কার। সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যও অভিযোগ করেন, ‘‘শুক্রবার থেকেই তৃণমূল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু যাদের কাছে অভিযোগ করব, সেই পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা তো নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওই দুষ্কৃতীদের।’’

বিরোধীদের দাবি, বিনা লড়াইয়ে জেতা আসনের ভাগ্য আদালতে ঝুলে থাকায় বোর্ড গড়া নিশ্চিত করতে পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতে অন্তত সাতটি আসন যে পেতেই হবে, সেই চাপেই আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক দল। নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘আমাদের আগেও কোনও চাপ ছিল না, এখনও নেই। মানুষ ওঁদের সঙ্গে নেই, তাই ওঁরা অলীক জুজু দেখছেন।’’

বিরোধীদের আশঙ্কা, শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলে যে সব জায়গায় ভোট হচ্ছে না, সেখান থেকে ভোটকেন্দ্রে বাহুবলী আমদানি করা হতে পারে। যেমন নদিয়ার হরিণঘাটা বা মুর্শিদাবাদের ডোমকল, ভগবানগোলা-২, রানিনগর-১ ও ২, মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ, নবগ্রাম ও ভরতপুর-২ ব্লক থেকে দুষ্কৃতীরা অন্য ব্লকে, এমনকি পাশের জেলাতেও ‘ভোট করাতে’ যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনটা যে ঘটতে পারে, তা কিন্তু দুই জেলার গোয়েন্দা দফতর সূত্রেও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে বেলডাঙা-২ ব্লকের কংগ্রেস প্রার্থী হুমায়ুন কবীরের অভিযোগ, ‘‘ন’টি গাড়িতে ভরতপুর-২ থেকে আসা দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সালার থানার পুলিশ তাদের সঙ্গে করে এনেছিল। কান্দির এক তৃণমূল নেতার পাঠানো দুষ্কৃতীরা এখানে তাণ্ডব চালাচ্ছে।’’ ডোমকলের পুরপ্রধান তথা জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সৌমিক হোসেন অবশ্য পাল্টা বলেন, ‘‘বিরোধীরা গুজব ছড়াচ্ছে। এ সব কথার কোনও ভিত্তি নেই। যা গরম পড়েছে, তার উপর আবার ভোটে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা, দুইয়ে মিলিয়ে বিরোধীদের মাথার ঠিক নেই।’’

দুই জেলার পুলিশকর্তারাও শাসক দলের সঙ্গে তাঁদের যোগসাজসের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ উড়িয়ে দিচ্ছেন। নদিয়ার পুলিশ সুপার সন্তোষ পান্ডে বলেন, “এই জেলায় মোটে ৬০টির মতো বুথে ভোট হচ্ছে না। বাকি বুথে কোনও না কোনও স্তরে ভোট হচ্ছে। কোনও এলাকাতেই যাতে বাইরের লোক ঢুকতে না পারে, তার জন্য নজরদারি আছে। নাকাবন্দি চলছে।”

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও জানান, শুক্রবার বিকেল ৫টায় প্রচার শেষ হওয়ার পর থেকেই গোটা জেলা জুড়ে, বিশেষত মালদহ, বীরভূম, বর্ধমান, মালদহ সীমানা লাগোয়া এলাকায় যাতায়াতে নিয়ন্ত্রণ করতে রাস্তায় ‘নাকা’ থাকছে। গাড়ি পরীক্ষা করে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখে তবেই ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। তিনি বলেন, ‘‘অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের ১০০ এবং রাজ্য পুলিশের এক হাজার কর্মী জেলায় ভোটের ডিউটিতে এসেছেন। বহিরাগতরা কোথাও ঘাঁটি গেড়েছে খবর পেলেই পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE