Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
গণনায় কারচুপি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

ছাপ্পার স্ট্যাম্প এল কোথা থেকে

মাজদিয়ার বুথে ঢুকে ছাপ্পা মারার ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে ঠিকই। কিন্তু ব্যালটে ছাপ মারার স্ট্যাম্প তাদের কাছে কী করে এল, সেই রহস্যের সমাধান হয়নি। 

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

এত দিন ছাপ্পা ছিল মূলত ভোটের বুথেই। গণনাকেন্দ্রেও যে একটু-আধটু কারচুপি করা হতো না, তা নয়। কিন্তু এ বারের মতো প্রকাশ্যে তা চলে আসেনি কখনও।

মাজদিয়ার বুথে ঢুকে ছাপ্পা মারার ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে ঠিকই। কিন্তু ব্যালটে ছাপ মারার স্ট্যাম্প তাদের কাছে কী করে এল, সেই রহস্যের সমাধান হয়নি।

জেলা প্রশাসনের কাছে কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। নদিয়া জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “নানা ভাবেই ওই স্ট্যাম্প ওদের কাছে আসতে পারে। এমনটাও হতে পারে যে ওরা বাইরে থেকে বানিয়ে এনেছিল।”

সেটা যে একেবারে অসম্ভব নয়, তা মানলেও প্রশাসনের একটা অংশ মনে করছেন ভোটের দিনই সেগুলি হাতসাফাই হয়ে থাকতে পারে। এক কর্তার ব্যাখ্যা, ভোটের বুথগুলিতে চার-পাঁচটা করে স্ট্যাম্প দেওয়া হয়। কিন্তু তার সব ক’টি ফের ব্লক অফিসে জমা পড়ল কি না, সেই হিসেব ঠিক মতো রাখা হয় না। সেই ফাঁক গলেই স্ট্যাম্প হাতসাফাই হয়েছে। আবার, পরিচালন সমিতির নির্বাচনের জন্যও স্কুল কর্তৃপক্ষ বিডিওদের কাছ থেকে স্ট্যাম্প নিয়ে যান। অনেক সময়ে সেগুলি আর ফেরত আস না। তেমন কোনও স্ট্যাম্পও ওই যুবকদের হাতে চলে গিয়ে থাকতে পারে।

শুধু তো কৃষ্ণগঞ্জ নয়। দুই জেলার নানা বুথ থেকেই বিরোধীদের মারধর করে বার করে দিয়ে কারচুপি করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ছাপ্পা মেরে বিরোধীদের পাওয়া ভোট বাতিল করিয়ে দেওয়া ছাড়াও প্রয়োগ করা হয়েছে অন্য কৌশল। বহরমপুর ব্লকের দৌলতাবাদ পঞ্চায়েতের একটি আসনে ১০ নম্বর বুথে মোট ভোট পড়েছে ৪৭৫। অথচ গুনতে গিয়ে দেখা গেল, ব্যালট রয়েছে ৫৯২টি। বাড়তি ১১৭টি ব্যালটে প্রিসাইডিং অফিসারের সই, সরকারি সিলমোহর ছিল না। বহরমপুরের পাকুড়িয়াতেও ১৯৭ ও ১৯৮ নম্বর বুথে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে একটিতে ৩৫টি, অপরটিতে ৬২টি ব্যালট ছিল যেখানে প্রিসাইডিং অফিসারেরর সই বা সিলমোহর ছিল না।

‘স্ট্রংরুমে’ ব্যালট বাক্স সুরক্ষিত ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের। তাঁর সন্দেহ, ‘‘ব্যালট বাক্সের সিল খুলে নতুন করে ছাপ্পা মেরে বাক্সে ভরেছে শাসক দল। না হলে ভোটকর্মীদের সই বা সিল ছাড়াই ব্যালট এল কী ভাবে?’’

শক্তিপুরের কামনগর পঞ্চায়েতের দু’টি আসনেও বাড়তি ব্যালটে ছাপ্পা মারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেস নেতা হুমায়ুন কবীরের দাবি, ‘‘তৃণমূলের কারচুপি ধরা যাতে না পড়ে সে জন্য গণনাকেন্দ্রের বিরোধী দলের কাউন্টিং এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। ওই দু’টি আসনেই গণনাকেন্দ্রে ব্যালট নিয়ে গিয়ে ছাপ্পা মেরে জিতেছে তৃণমূল।’’

সাগরদিঘি কলেজে গণনা কেন্দ্রের ৯ নম্বর ঘরে চার রাউন্ড গণনার পরে দেড়শো ব্যালট নিয়ে পালিয়েছিল কিছু দুষ্কৃতী। কংগ্রেস প্রার্থী তুহিনা খাতুন ২৩০ ভোটে এগিয়েছিলেন তখন। পরে ৬২ ভোটে তিনি হেরে যান। কংগ্রেসের অভিযোগ, ব্যালট লুটের ঘটনাটি পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনেই ঘটে। অথচ লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলে বিডিও তা নিতে অস্বীকার করেন। পরে ইমেল করে নির্বাচন কমিশন, জেলাশাসক ও বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানানো হয়। সাগরদিঘির বিডিও দেবব্রত সরকার বলেন, “ এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তবে কংগ্রেস প্রার্থীর ইমেল পেয়েছি।’’

এই কারচুপি নিয়ে জেলাশাসক ও নির্বাচন কমিশনের কাছেই অভিযোগ জমা দিয়েছে বিরোধীরা। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলেন, ‘‘বিরোধীদের থেকে কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তা পেলে তদন্ত করে পদক্ষেপ করা যেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE