বৈশাখী ঘোষ। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক
খোলা জানলায় বসে হাতটা একটু বাড়িয়ে দিলেই মেয়েটি আঁচ পায়, মেঘ না রোদ্দুর। বৈশাখী বিড় বিড় করে বলছে, ‘‘হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁতে খুব ভাল লাগে, জানেন।’’ সেই জানলাটা ক’দিন হল বন্ধ করে রাখছে মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙার মেয়ে। ‘‘বাড়ির সামনে দিয়ে হই হই করে ছেলেপুলেরা মাধ্যমিক দিতে যাচ্ছে...আমি নিতে পারছিলাম না!’’—বলতে বলতে ঠোঁট কাঁপে তার।
একের পর এক পরীক্ষা দিয়ে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে যাওয়ার মুখে মাধ্যমিকে আর বসা হয়নি জন্মান্ধ বৈশাখী ঘোষের। কেন? সে জানায়, ‘‘অনেক খুঁজেছিলাম, কিন্তু রাইটার হতে রাজিই হল না কেউ।’’ সেই কষ্ট চেপে এখন বন্ধ জানলার সামনে ফুঁপিয়ে কাঁদে মেয়েটি।
নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবার। বাবা-মা, তিন অন্ধ বোন। বাবা রঞ্জিত ঘোষ বলছেন, “বৈশাখীর জন্মের পরে ওর অন্ধত্ব আমরা বুঝতে পারিনি। এক বছর বয়সে বুঝলাম মেয়েটা দেখতে পায় না।’’ তার পর একে একে প্রিয়া ও রাখিও একই আঁধার চোখে নিয়ে জন্মেছে। অভাবের সংসারে তিন জনের তেমন ভাল চিকিৎসাও হয়নি। তাদের পড়াশোনার জন্য গ্রামে তেমন পরিকাঠামো নেই। তবু ছোটবেলায় মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে পড়িয়েছিলেন দাদু-দিদা। সেখানে প্রাথমিক আর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে দশ ক্লাস পার করেও থমকে যেতে হয়েছে বৈশাখীকে। জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে নবম, স্কুলের বাৎসরিক পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষা দিয়েই পাশ করত সে। কিন্তু মাধ্যমিকে রাইটার না পাওয়ায় তার আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। সেই আফসোস এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে মেয়েটি। গতবারের অ্যাডমিট হাতে এদিন বৈশাখী জানায়, “বইয়ের অক্ষর তো দূরের কথা, নিজের বাবা মাকেও কখনও চোখে দেখিনি। যত বড় হয়েছি বুঝেছি লেখাপড়া করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ক্লাসে শিক্ষকদের কথা শুনে মুখস্থ করতাম। টেস্টে জেসমিনা আখতার নামে এক জন রাইটার পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু ওর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় অ্যাডমিট হাতে পেয়েও মাধ্যমিকে বসতে পারিনি।’’
করিমপুর ১ বিডিও সুরজিৎ ঘোষ এত দিন জানতেন না বৈশাখীর ঘটনা। বলছেন, ‘‘এখনই লোক পাঠাচ্ছি। দেখি কী ধরনের সাহায্য করা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy