বই-উৎসব। নিজস্ব চিত্র
ছুটির দিন নয়। আবার কোনও অনুষ্ঠানও চলছে না। লালবাগ এমএমসি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে বেবাক বন্ধ পঠনপাঠন। কিন্তু কেন?
ক্লাশ নাইনের মেহুলি আখতার ব্যোমকেশ সমগ্র থেকে মুখ তুলে পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘‘ক্লাশ হবে কী করে? স্কুলে তো এখন উৎসব চলছে— বই উৎসব। উৎসবই বটে, স্কুলের চারদিকে হই-চই কাণ্ড। কারণ, সোমবার স্কুলে শুরু হয়েছে তিন দিনের বই মেলা। স্কুলের বারান্দায় বসে মেহুলি নামের যে কিশোরী ‘সত্যান্বেষী’র গল্পে মজে, এ বার ইদে সে কোনও নতুন জামা কেনেনি। সেই টাকায় কিনেছে বই। শুধু মেহুলিই নয়, ক্লাস ফাইভের দিয়া মণ্ডলও বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছে তার কম দামি জামা হলেই চলবে। সে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিনেছে ফেলুদার বই।
ফেলুদার মগজাস্ত্র তো বটেই, সে জটায়ুরও বড় ভক্ত। সারা স্কুলেই এমন রিয়া-মেহুলির ভিড়। পঠনপাঠন বন্ধ হলেও এই তিনদিন স্কুল কামাই করবে না স্কুলের কোনও ছাত্রীই। শুধু স্কুলের ছাত্রীরাই নয়, এই তিনদিন সকলের জন্যই গেট খোলা রাখছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। টিফিনের ফাঁকে পাশের স্কুলের ছাত্ররাও এসে বই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। মূলত ছাত্রীরা বছরভর টাকা জমিয়ে রাখে এই মেলা থেকে বই কেনার জন্য। এ বারে স্কুলের বই মেলা চার বছরে পা দিল।
প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা ঘোষ বলেন, ‘‘অবসর সময়ে বই পড়ার অভ্যাস তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৩ সালে প্রথম বইমেলা আয়োজন করা হয়। তাতে এলাকার মানুষ থেকে অভিভাবক ও ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। আগে যে ছাত্রী মোবাইল ও কম্পিউটারে মুখ গুঁজে বসে থাকত, তারা এখন অবসর সময় কাটায় বই পড়ে।’’ বহরমপুর এবং এলাকার ন’জন পুস্তক ব্যবসায়ী বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার বইয়ের সম্ভার নিয়ে হাজির হয়েছেন। ৯টি শ্রেণিকক্ষ বই-বিপণীর চেহারা নিয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ছাত্রীদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী ও বিজ্ঞানের মডেল। প্রতি দিন সকাল ১১টা থেকে চারটে পর্যন্ত খোলা থাকছে বইমেলা। পঠনপাঠন বন্ধ থাকলেও স্কুলে ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের উপস্থিত থাকতে হবে বলে নির্দেশ রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy