ঘটনা যাই হোক না কেন, রাস্তা রুখে ‘প্রতিবাদ’-এর কোনও বিরাম নেই। তাতে যতই নির্দোষদের ভোগান্তি মাত্রা ছাড়াক না কেন।
সেই তালিকায শেষতম সংযোজন রবিবার নবগ্রামের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের ঘটনা। অবরোধের কারণ, কংগ্রেসের দু’টি পার্টি অফিস ভাঙচুর। ঘটনাস্থল নবগ্রামের পাঁচগ্রাম হলেও, অববরোধের জেরে গাড়ির লাইন জেলা সদর বহরমপুর ছোঁয়। অন্যদিকে মোড়গ্রাম মোড় পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
তার ফলে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, জাতীয় সড়ক ছোঁয়া রাজ্য সড়কগুলি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় আশপাশের জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দফায় দফায় পুলিশ যায় এবং ব্যর্থ হয়ে ফিরেও আসে। ছাড়া মেলেনি অ্যাম্বুল্যান্সেরও। শেষ পর্যন্ত, সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে অবরোধ যখন ওঠে, ততক্ষণে পুরো বহরমপুর শহর অবরুদ্ধ। যা। জেরে যান-যন্ত্রণা চলে বিকেল পর্যন্ত। আমজনতার অভিযোগ, পুলিশ উদ্যোগী হলে আরও আগেই অবরোধ উঠতে পারত।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘অবরোধের খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু শুরু থেকেই বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত ছিল। বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার চেষ্টা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত লালবাগ থেকে সার্কেল ইন্সপেক্টর গিয়ে বিভোক্ষকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলতে কয়েক ঘণ্টা কেটে যায়।’’
নবগ্রাম থানার পাঁচগ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ মোড়ে দুটি দলীয় আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে কংগ্রেসের। শনিবার রাতে ওই দুটি কার্যালয়ে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় এবং লুঠপাট করে বলে অভিযোগ। তাতে ভাঙে খানকতক ফাইবারের চেয়ার, খোয়া যায় হাজার ছয়েক টাকা। মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা ধীরেন্দ্রনাথ যাদবের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের ওই দুটি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালায়।’’ নবগ্রাম থানায় তৃণমূলের সাত কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে কংগ্রেস। পুলিশ সুপার জানান, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।
সকাল থেকেই বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস কর্মীরা প্রথমে নবগ্রাম-পাঁচগ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের মনে হয় প্রতিবাদ জোড়ালো হচ্ছে না। তাই পলসণ্ডা মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর বসে পড়ে কয়েকশো কংগ্রেস কর্মী।
রাজ্য সড়ক অবরোধের ফলে কান্দি, খড়গ্রামের রাস্তা আগেই বন্ধ হয়েছিল। জাতীয় সড়ক অবরোধের ফলে উত্তর-দক্ষিণের যোগসূত্র কেটে যায়। পুলিশ যায়, অবরোধ তুলতে না পেরে ফিরেও আসে। এ দিকে পুলিশকে ফিরে যেতে দেখে বিক্ষোভের বহর বাড়ে। ফাঁকতালে অবরোধে ঢুকে পড়ে সিপিএমও। এ দিকে যানবাহনের লাইন খাগড়াঘাট ছাড়িয়ে বহরমপুর শহরে ঢুকে পড়ে। বেলা বাড়তে তা ভাকুড়ি রেলগেট ছাড়িয়ে প্রায় বেলডাঙা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তার পলে বীরভূম হয়ে বাঁকুড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
ছোট গাড়ি ফিরে গেলেও, বাস এবং লরি দাঁড়িয়ে পড়ে। চরম হয়রানি হয় যাত্রীদের। পলসণ্ডার অন্যদিকে গাড়ির লাইন মোড়গ্রাম মোড় ছাড়িয়ে যায়। তার ফলে সেদিক দিয়ে বীরভূম হয়ে পানাগড়ে যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়।
সাধারণ মানুষের ভোগান্তিতে কী লাভ? যুতসই ব্যাখ্যা নয়, নবগ্রামের বিধায়ক, কংগ্রেসের কানাই মণ্ডলের বক্তব্যে প্রতিশোধের সুর। তিনি বলেন, ‘‘টানা ২৬ দিন রাস্তা অবরোধ করে গোটা রাজ্যকে যারা অচল করে রেখেছিল, তাদের মুখে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা মানায় না।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা বলেন, ‘‘পার্টি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। নিজেরাই ভেঙে পঞ্চায়েত ভোটের আগে পায়ের তলায় মাটি খুঁজছে ওরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy