জরুরি বিভাগে দু’জন কর্মী। দেখা নেই কোনও ডাক্তারের। অথচ খাতায়-কলমে হাজির আট জন চিকিৎসক। গোটা হাসপাতাল ঢুঁড়েও সন্ধান মিলল না তাঁদের। বাকি বিশ জন ডাক্তার ছুটিতে!
আচমকা নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সম্প্রতি এমনটাই দেখে এসেছেন কৃষ্ণনগর (সদর) মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শচীন ভগত এবং মহকুমাশাসকের দফতরের হেডক্লার্ক জ্যোর্তিময় রায়। তাঁদের কাছে রিপোর্ট পেয়ে বেজায় খেপে গিয়েছেন কৃষ্ণনগর (সদর) মহকুমাশাসক ইউনিস রিসিন ইসমাইল। হাসপাতাল সুপারের কাছে কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য চিঠি দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককেও।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ১ নভেম্বর বিকেল ৪টে নাগাদ হঠাৎই হাজির হন দু’জন। হাসপাতাল সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করার পরে চিকিৎসকদের হাজিরা খাতা খুলে দেখেন, ২৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র আট জন সই করেছেন। বাকিটা পুরো ফাঁকা। জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে প্রসূতি, পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন-সহ সমস্ত বিভাগে ঘুরে কোনও ডাক্তারের দেখা পাননি তাঁরা। হেডক্লার্ক বলেন, “হাসপাতাল ঘুরে হাজিরা খাতায় সই করা ডাক্তারদের কোথাও দেখতে পেলাম না। এমনকী জরুরি বিভাগেও কেন চিকিৎসকের দেখা পাই নি।” এর পরেই হাসপাতাল সুপারের কাছে সে দিনের হাজিরা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চান মহকুমাশাসক। মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, হাসপাতাল সুপার বাপ্পা ঢালি যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, তাতেও আট জনের হাজিরা খাতায় সই করার কথা উল্লেখ রয়েছে। বাকিদের মধ্যে এক জন ছুটি নিয়েছেন উচ্চশিক্ষার জন্য। এক জন মেডিক্যাল ক্যাম্পে। এগারো জন চিকিৎসক অনুপস্থিত। আর সাত জন চিকিৎসক হাসপাতালে উপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় সই করেননি বলে সুপারের দাবি।
এর কিছু দিন আগেই মুর্শিদাবাদে পরিদর্শনে গিয়ে ১০ জন ডাক্তারকে শো-কজ করেছেন স্বাস্থ্যসচিব। তার পরেও যে অবস্থা বিশেষ বদলায়নি, এই রিপোর্ট তার হাতে-গরম প্রমাণ।
এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে প্রত্যাশিত ভাবেই বেজায় চটেছেন মহকুমাশাসক। তিনি সুপারের কাছে জানতে চেয়েছেন, যে সব চিকিৎসক ডিউটিতে হাজির ছিলেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি কেন? উত্তর দেওয়ার জন্য তিনি সুপারকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন।
সুপারের কথা অনুযায়ী সাত জন চিকিৎসক যদি হাসপাতালে উপস্থিত থেকেই থাকেন, তাঁরা সই করলেন না? আর, তাঁদের দেখতেই বা পেলেন না কেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট? তবে কি তাঁদের বাঁচাতে চাইছেন সুপার? ওই হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ১২৫। জ্বরের রোগীর মারাত্মক চাপ রয়েছে এখনও। এই অবস্থায় ১১ জন চিকিৎসক ছুটি নেন কী করে? কেনই বা টিকি দেখা গেল না সই করা আট চিকিৎসকের?
মহকুমাশাসক বলেন, “এখন যে জরুরি পরিস্থিতি চলছে, এই সময়ে এক জন চিকিৎসকেরও দেখা মিলল না? এটা কি মেনে নেওয়া সম্ভব? পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।” হাসপাতাল সুপারের ব্যাখ্যা, “হাজিরা খাতায় সই করা চিকিৎসকরা দুপুরে বহির্বিভাগে ডিউটি করে চলে গিয়েছিলেন। আর সাত জন অন-কল ছিলেন। তাই সই করেননি। বাকিদের ডিউটি ছিল না বলেই তাঁরা আসেননি।” যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “সুপারকে বলা হয়েছে, যে সব চিকিৎসকের গাফিলতি ধরা পড়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন মতো পদক্ষেপ করে আমাকে জানাতে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy