Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাঠে নয় শৌচকর্ম, নজরদারি পড়ুয়াদের

কাকভোরে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কুল পুড়ুয়ারা। পিছু পিছু জেলা প্রশাসনের কর্তারা। মাঠের দিকে কাউকে যেতে দেখলেই প্রশ্ন, ‘‘ও কাকু শৌচকর্ম করতে নয় তো?’’ প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। বলছেন, ‘‘না রে বাবা, সে সব আগে হত। এখন তো বাড়িতেই শৌচাগার রয়েছে।’’ এ বার আর পড়ুয়ারা নয়, এগিয়ে আসছেন প্রশাসনের কতার্রা। তাঁরা বলছেন, ‘‘বাড়িতে শৌচাগার থাকলেই হবে না। সেটা ব্যবহার করার অভ্যাসও তৈরি করতে হবে।’’

নজরদারি পড়ুয়াদের। সঙ্গে ডিএম পিবি সালিম। —নিজস্ব চিত্র।

নজরদারি পড়ুয়াদের। সঙ্গে ডিএম পিবি সালিম। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর ও তেহট্ট শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৭
Share: Save:

কাকভোরে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কুল পুড়ুয়ারা। পিছু পিছু জেলা প্রশাসনের কর্তারা। মাঠের দিকে কাউকে যেতে দেখলেই প্রশ্ন, ‘‘ও কাকু শৌচকর্ম করতে নয় তো?’’ প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। বলছেন, ‘‘না রে বাবা, সে সব আগে হত। এখন তো বাড়িতেই শৌচাগার রয়েছে।’’ এ বার আর পড়ুয়ারা নয়, এগিয়ে আসছেন প্রশাসনের কতার্রা। তাঁরা বলছেন, ‘‘বাড়িতে শৌচাগার থাকলেই হবে না। সেটা ব্যবহার করার অভ্যাসও তৈরি করতে হবে।’’

মঙ্গলবার সকাল থেকেই নদিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তেই দেখা গিয়েছে এমন দৃশ্য। স্কুল পড়ুয়া, জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে ছিল পাড়া কমিটিও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়াকে ‘উন্মুক্ত শৌচবিহীন’ জেলা তৈরি করতে ২০১৩ সালে শুরু হয় ‘সবার শৌচাগার’ প্রকল্প। সমীক্ষায়া দেখা যায় প্রায় ৩ লক্ষ ৩৯ হাজার পরিবারে কোনও শৌচাগার নেই। জেলা প্রশাসনের দাবি, এর মধ্যে জেলায় প্রায় ৩ লক্ষ ২৫ হাজার পরিবারে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এখন সকলেই যাতে শৌচাগার ব্যবহার করে তার জন্য প্রচার ও কর্মসূচি নেওয়া হয়। স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মাঠেঘাটে যাতে কেউ শৌচকর্ম না করে সে দিকে নজর রাখতে পাড়ার বিশিষ্ট লোকজনদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পাড়া কমিটি।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের বাণী রায় বলেন, ‘‘৩১ মার্চ পর্যন্ত ছিল শৌচাগার তৈরির কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে সেই কাজ শেষ। সেই কারণেই এই দিনটিকে নজরদারির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।’’ জেলা প্রশাসনের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, চলতি বছর ১ এপ্রিলের পরে যদি কেউ উন্মুক্ত পরিবেশে শৌচকর্ম করেন তাহলে সেই পরিবারকে শাস্তি হিসাবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সব রকম সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে।

আগামী ৩০ এপ্রিল নবদ্বীপে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা শাসক পিবি সালিম জানান, সেখানেই তিনি নদিয়া জেলাকে ‘উন্মুক্ত শৌচবিহীন জেলা’ হিসাবে ঘোষণা করবেন। ইতিমধ্যে জেলার এই সাফল্যের জন্য ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ফেসবুকের মাধ্যমে সেই সাফল্যকে তুলে ধরায় আমরা খুব খুশি।’’

অন্য দিকে, এ দিনই সরকারি শৌচালয়ের দাবিতে তেহট্টের পলসণ্ডার গ্রামবাসীদের একাংশ শিক্ষকদের ঘেরাও করে রাস্তা অবরোধ করেন। নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা শৌচাগার ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে প্রচার সেরে স্কুলে ফেরার পথে এলাকার সব পরিবারে শৌচাগার নেই এমন অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষকদের একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। বার্নিয়া-কুলগাছি রাস্তাও অবরোধ করা হয়। খবর পেয়ে তেহট্ট মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা শৌচাগার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ উঠে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা তেসের আলি মণ্ডল বলেন, “মাঠেঘাটে কেউ শৌচকর্ম করলে সরকারি কোনও সুবিধা পাওয়া যাবে না। অথচ আমাদের গ্রামে বহু পরিবারেই শৌচাগার নেই। সেক্ষেত্রে কী হবে?’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, যে সব পরিবারে শৌচাগার নেই, দ্রুত সেই পরিবারে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE