Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পোস্ত চাষ খুঁজতে উড়ল ড্রোন

রঘুনাথগঞ্জে সীমান্ত লাগোয়া পদ্মাপারেও পৌঁছে গিয়েছেন পুলিশ ও নারকোটিক্স দফতরের অফিসাররা। প্রস্তুত ড্রোনও। যে দিকে চোখ যায় বিঘের পর বিঘে নানা সব্জিতে ভরে আছে মাঠ। বোঝার উপায় নেই তার মধ্যে পোস্ত গাছ কোনটা। একে তো সীমান্ত, তার উপরে চর।

নজরদারি। নিজস্ব চিত্র

নজরদারি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:০০
Share: Save:

এত দিন অবধি লোকে বড় জোর পুলিশ-কুকুর দেখেছে। তা বলে মেঘনাদের মতো আকাশ থেকে উঁকিঝুঁকি? আলবাত না!

গ্রামে পুলিশ এসেছে। পোস্ত চাষ তারা ধরবেই। আকাশে উড়িয়েছে চার পা-ওয়ালা অদ্ভূতদর্শন এক যন্ত্র। সে নাকি উপর থেকে নজরদারি চালাবে, ছবিও তুলবে।

হন্তদন্ত হয়ে কুলগাছি বটতলায় হাজির সত্তরোর্ধ সলেমান শেখ। তাঁর মতো অনেকেই তখন ভিড় করেছেন উড়ন্ত ‘‌ড্রোন’ দেখতে। শনিবার আধ ঘণ্টা ধরে লালগোলা ও রঘুনাথগঞ্জে সীমান্ত লাগোয়া কুলগাছি, ইছাখালি, ইলিমপুর, চমকপুরের উপর দিয়ে উড়ে ড্রোন নামল মাঠের মধ্যে।

অনেকেরই মুখ কাঁচুমাচু। লুকিয়ে-চুরিয়ে কেউ যদি ও সব চাষ করে থাকে আর তা ধরে ফেলে ওই উড়ুক্কু নজরদার, এলাকার লোকের মাথা কাটা যাবে একেবারে। কিন্তু না, ড্রোনে ওঠা ছবি জানিয়ে দিল পোস্ত চাষ নেই কুলগাছি সংলগ্ন আশপাশের মাঠে। হাঁফ ছাড়লেন সলেমানেরা।

সলেমানের কথায়, “সেটা ২০০৬ কী ’০৭ হবে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে পোস্ত চাষের সে কী রমরমা। এক বিঘে জমি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে পোস্ত চাষের হিড়িক। অনেকে না জেনেই অপরকে দেখে চাষে নেমে পড়েছিল। তার পর পুলিশের তাড়া খেয়ে কত লোককে যে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তাই পুলিশ এলে এখনও ভয় হয়।”

বাবুপুরের এক যুবক জানান, এক সময়ে চোখের সামনেই পোস্ত গাছ বেড়ে উঠতে দেখেছেন। এক দিকে পুলিশের তাড়া আর অন্য দিকে দুষ্কৃতীদের হুমকি। ভয়ে আসল চাষিদের নামটাও পুলিশকে জানাতে পারেননি গ্রামবাসীরা। উল্টে যাঁদের জমি, তাঁদেরই তাড়া করে বেরিয়েছে পুলিশ। যারা চাষ করেছিল, মাঝখান থেকে তারাই ছাড় পেয়ে গিয়েছে। ২০০৭ সালে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন গ্রামবাসীদের নিয়ে সভা করার পর অভিযান চালায়। জমির পর জমি থেকে কুঁড়ি সমেত পোস্ত গাছ উপড়ে দেওয়া হয়। যারা লোভে পড়ে চাষ করেছিল, তাদের জুটল এক দিকে পুলিশের তাড়া আর অন্য দিকে লোকসান। কেউ জেলে ঢুকল, কেউ ছুটল বাড়ি ছেড়ে। এর পর থেকেই গোটা এলাকায় পোস্ত চাষ বন্ধ।

রঘুনাথগঞ্জে সীমান্ত লাগোয়া পদ্মাপারেও পৌঁছে গিয়েছেন পুলিশ ও নারকোটিক্স দফতরের অফিসাররা। প্রস্তুত ড্রোনও। যে দিকে চোখ যায় বিঘের পর বিঘে নানা সব্জিতে ভরে আছে মাঠ। বোঝার উপায় নেই তার মধ্যে পোস্ত গাছ কোনটা। একে তো সীমান্ত, তার উপরে চর। নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না।

ড্রোন উড়ল সেখানেও। মাটিতে রিমোট হাতে নারকোটিক্স অফিসার। তাঁর হাতের ইশারাতেই ড্রোন চলছে মাটি থেকে ১০-১৫ ফুট উপর দিয়ে। উঠছে ছবি। মিনিট বিশেক বাদে ফের যখন ড্রোন ফিরল, অনেকেই ঝুঁকে পড়লেন ছবি দেখতে। মিনিট দশেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলল। মুখে একটিও কথা নেই অফিসারদের। একটি জমির ছবি দেখে তাঁদের সন্দেহ হচ্ছিল। তবে শেষে বোঝা গেল, সন্দেহ অমূলক। বড়শিমুলেও পোস্ত চাষ নেই।

পোস্ত চাষের হদিস পেতে গত দু’দিন ধরেই গোটা মুর্শিদাবাদ জুড়ে চলেছে ড্রোন অভিযান। রঘুনাথগঞ্জ থানার আইসি সৈকত রায় জানান, পোস্ত চাষ রুখতে নজরদারি আছেই। সিভিক ভল্যান্টিয়ারদেরও সেই কাজে লাগানো হয়েছে। তবু তাতে কোথাও ফাঁকফোকর রয়ে গিয়েছে কি না তা দেখতেই পুলিশ ও কলকাতা থেকে আসা রাজ্য নারকোটিক্স বিভাগর অফিসারেরা ড্রোন অভিযান চালান। তবে কোথাও পোস্তর হদিস মেলেনি।

কলকাতার নারকোটিক্স দফতরের ইন্টেলিজেন্স ইনস্পেক্টর সুরজিৎ সেন জানান, এক সপ্তাহ ধরে সারা রাজ্যেই পোস্ত চাষের চিহ্নিত এলাকাগুলিতে অভিযান চালানো হচ্ছে। কলকাতা থেকে ড্রোন নিয়ে তাঁরা জেলায়-জেলায় ঘুরছেন। জেলা পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেই ছকা হচ্ছে অভিযান। সঙ্গে থাকছে স্থানীয় পুলিশও। এউ দলটি ফিরে রিপোর্ট জমা দিলে তবেই বোঝা যাবে রাজ্যে পোস্ত চাষের ছবিটা কতটা বদলেছে। কোথাও পোস্ত চাষের হদিস পাওয়া গেলে এর পর তা নষ্ট করতে অভিযান হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drone Surveillance Poppy Seeds Cultivation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE