Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
সরকারি পরব প্রায় শেষ

মজুত ফুরোলে রক্ত আর কই

স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, নিয়মিত যদি রক্তদান শিবির হতে না থাকেত, ফের আগের রাস্তায় হাঁটতে হবে। অর্থাৎ, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত পেতে হলে সঙ্গে ‘ডোনার’ নিয়ে যেতে হবে। তাঁর দেওয়া রক্তের বদলে মিলবে এক প্যাকেট রক্ত।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০২:৩৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় পুলিশ, পুরসভা, ব্লক প্রশাসন মিলে গত এক মাসে যা রক্ত জোগাড় করেছে তাতে ব্লাড ব্যাঙ্কে আপাতত জোগান পর্যাপ্ত।

কিন্তু কথায় বলে, ‘বসে খেলে কুবেরের ধনও এক দিন ফুরোয়’। এই উদ্যোগ যদি হঠাৎ-খেয়াল হয়েই রয়ে যায়, তার যদি ধারাবাহিকতা না থাকে তবে ক’দিন চলবে এই রক্ত দিয়ে?

স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, নিয়মিত যদি রক্তদান শিবির হতে না থাকেত, ফের আগের রাস্তায় হাঁটতে হবে। অর্থাৎ, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত পেতে হলে সঙ্গে ‘ডোনার’ নিয়ে যেতে হবে। তাঁর দেওয়া রক্তের বদলে মিলবে এক প্যাকেট রক্ত।

নদিয়ায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে রয়েছে ২৭৯ প্যাকেট রক্ত। দিনে প্রয়োজন গড়ে ৪০-৪৫ প্যাকেট রক্ত। নতুন রক্তের জোগান না এলে বড় জোর এক সপ্তাহ চলবে। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল পাসপাতালে রয়েছে ৩৫০ প্যাকেট রক্ত। দিনে প্রয়োজন গড়ে ১৫-২০ প্যাকেট, অর্থাৎ বড় কিছু ঘটে না গেলে সপ্তাহ তিনেক চলবে। কল্যাণী জওহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে রয়েছে ২০১ প্যাকেট রক্ত। দিনে প্রয়োজন গড়ে ২০-২৫ প্যাকেট— দশ দিনেই সব বেরিয়ে যাবে। গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে রয়েছে ১১৭ প্যাকেট রক্ত। প্রতি দিন লাগে গড়ে ২৫-৩০ প্যাকেট, অর্থাৎ মোটে চার দিনের রক্ত মজুত রয়েছে।

ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলার ২৭টি থানা, ২৬টি ব্লক, ৪টি পুরসভা মিলিয়ে রক্ত সংগ্রহের কর্মসূচি শেষ পর্যায়ে। সংগৃহীত রক্ত সংরক্ষণ করা হয়েছে কান্দি, জঙ্গিপুর, লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল এবং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। শনিবার সবচেয়ে বেশি, মোট ২৭৫৫ প্যাকেট রক্ত ছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে। ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে দৈনিক ওই গড়ে ৬০-৭০ প্যাকেট রক্ত বেরিয়ে যায়। অর্থাৎ ফের রক্তের জোগান না এলে দেড় মাসের মধ্যে ওই মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার কথা, তাও যদি এর মধ্যে বড়সড় কোনও দুর্ঘটনা ইত্যাদি না ঘটে। কান্দিতে মজুত ২৫৫ প্যাকেট রক্ত। রোজ লাগে গড়ে ১০ প্যাকেট, ফলে চলবে মাসখানেক। জঙ্গিপুরে ১২১ প্যাকেট রক্ত আছে। দৈনিক খরচ হয় গড়ে ৪০ প্যাকেট। অর্থাৎ খুব জোর তিন দিনের রসদ।

জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ এবং ধুলিয়ান পুরসভা রক্তদান শিবির করেনি। তাদের বক্তব্য, রমজান মাসে বহু মানুষ রোজা রাখায় শিবির করলেও রক্ত পাওয়া শক্ত। বাকি সব পুরসভা ও থানা ইতিমধ্যে করে ফেলেছে। এর পরে রক্ত জোগাবে কে?

দুই জেলার হাসপাতাল সুপারেরা জানাচ্ছেন, কিছু-কিছু রক্তদান শিবির হতেই থাকে। সেগুলো থেকে কিছু রক্ত মেলে। তা ছাড়া, ২০১৩ সাল থেকেই প্রসূতি ও থ্যালাসেমিয়া রোগী ছাড়া অন্য রোগীদের বিনিময় প্রথায় রক্ত দেওয়া হয়। অর্থাৎ রক্ত পেতে গেলে তাঁদের ‘ডোনার’ এনে জোগান পুষিয়ে দিতে হয়।

অর্থাৎ, পরিকল্পনা করে শিবির চালিয়ে না গেলে ‘পুনর্মুষিক ভব’। বাম আমলে ক্যালেন্ডার করে সারা বছর শিবির করত ডিওয়াইএফ। তৃণমূল নেত্রী তাঁর দলের কর্মীদেরও বলেছেন মাঠে নামতে। কিছু জায়গায় তৃণমূল শিবির করেওছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা নগণ্য তো বটেই, হিসেব কষে নিয়মিত শিবির করার কোনও লক্ষণও নেই।

ফলে, ব্লাড ব্যাঙ্কে ক’দিনের স্বস্তি। তার পর ফের যে-কে-সেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE