Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

থাকা খাওয়ায় বদল, মড়ক ঠেকাল কেন্দুয়া

ফি বছর শীত আসলে শুরু হয় মড়ক। মারা যাচ্ছিল প্রচুর ছাগল। কিন্তু এ বছর স্রেফ থাকা, খাওয়ার বদল ঘটিয়ে সেই মড়ক ঠেকাল ফরাক্কার কেন্দুয়া।

ছাগলের পরিচর্যা। —নিজস্ব চিত্র।

ছাগলের পরিচর্যা। —নিজস্ব চিত্র।

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৪
Share: Save:

প্রতি বাড়ির উঠোনে বাঁধা একপাল ছাগল। কারও ঘরে দশটা, কারও ঘরে গোটা কুড়ি। ছাগল বিক্রির জন্য কেউ কেউ পঞ্চায়েত থেকে বাগিয়েছেন ট্রেড লাইসেন্সও!

কিন্তু ফি বছর শীত আসলে শুরু হয় মড়ক। মারা যাচ্ছিল প্রচুর ছাগল। কিন্তু এ বছর স্রেফ থাকা, খাওয়ার বদল ঘটিয়ে সেই মড়ক ঠেকাল ফরাক্কার কেন্দুয়া। ফেব্রুয়ারিতে মোটে চারটি ছাগল মারা গিয়েছে।

কেন্দুয়াতে প্রতি বাড়িতেই ছাগল ছিল দু’একটি করে। গ্রামবীসারা জানাচ্ছেন, কিন্তু ছাগল থেকে যে প্রচুর আয় হতে পারে তার পথ দেখিয়েছিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের তদারকিতে গোটা গ্রামে শুরু হয়েছে ছাগলের চাষ। অথচ এর আগে কেন্দুয়ার চিত্রটা এমন ছিল না।

রেশমি রবিদাসের কথায়, “প্রায় বাড়িতেই ছাগল ছিল ঠিকই, কিন্তু তার অর্ধেকটাই যেত মড়কের কোপে। ফলে ছাগল পোষাতে সেভাবে উতসাহ পেতাম না কেউই। কিন্তু এখন গ্রামের চেহারাটাই বদলে দিয়েছে ছাগলের পাল।” একই কথা জানাচ্ছেন আরও এক গ্রামবাসী ছায়া মণ্ডল।

স্থানীয় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রকল্প আধিকারিক সুকদেব ঘোষ জানান, গ্রামবাসীদের তাঁরা ছাগল প্রতিপালনে উৎসাহ দেন। মড়কে ঠেকাতে একটু সচেতনা দরকার ছিল। কেন্দুয়াতে সেটাই করা হয়েছে।

তিনি জানাচ্ছেন, প্রতিটি বাড়িতে তৈরি করানো হয়েছে বাঁশের মাচা। সেখানেই খড় ও চটের বস্তা বিছিয়ে ছাগলের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে শীতে। বদলানো হয়েছে ছাগলকে খাওয়ানোর পদ্ধতিও। সবুজ পাতা, ঘাস একটি জালের মধ্যে ভরে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঘাড় উঁচু করে তা খাচ্ছে ছাগলে। আর ছাগলের খাওয়ার জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা হয়ে একটি ইট। ইটটি তৈরি কিছু মিনারেলস দিয়ে। যেমন ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন, আয়োডিন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ই ইত্যাদি। সময়ে, অসময়ে ছাগল সামনে ঝোলানো মিনারেল ইট চাটছে। ফলে তার দেহে মিনারেলসের ঘাটতি মিটছে বেশিরভাগটাই।

ছাগল বেচে সংসার চালান সুনীতা রবিদাস। তাঁর বাড়িতে রয়েছে ছয়টি ছাগল। তিনি বলছেন, “প্রতি বছরই শীতে ছাগল মরে। এ বার চিকিৎসকের দাওয়াই ছাড়াও থাকা, খাওয়ার অভ্যাস বদলে ঠেকানো গিয়েছে সে মড়ক।”

ব্লক প্রাণি চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “গ্রামে গ্রামে ছাগলের মৃত্যুর কারণ সচেতনতার অভাব। কেন্দুয়াতে সেই সচেতনতাটাই ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। তাই লাভের মুখ দেখছে তাঁরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE