Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ট্রেন ধরার তাড়া আছে, তাড়াতাড়ি খাতা দাও!

অভিযোগ, ঠিক দুপুর দেড়টার পর থেকে অস্থির হয়ে ওঠেন কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। পড়ুয়াদের তাড়া দেন, ‘কী রে কদ্দুর? তাড়াতাড়ি হাত চালা বাবা।’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৭
Share: Save:

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট চলছে। বাংলা পরীক্ষা। পড়ুয়ারা একমনে লিখছে। হলে পায়চারি করছেন শিক্ষক ও দিদিমনিরা। পরীক্ষা শুরু হয়েছে সকাল ১১টায়। শেষ হওয়ার কথা ২.১৫।

অভিযোগ, ঠিক দুপুর দেড়টার পর থেকে অস্থির হয়ে ওঠেন কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। পড়ুয়াদের তাড়া দেন, ‘কী রে কদ্দুর? তাড়াতাড়ি হাত চালা বাবা।’ পরীক্ষার্থীরা হতবাক। এখনও ঢের দেরি। তবে তাড়া কেন?

সে উত্তর অবশ্য পাওয়া গিয়েছে খাতা-কলমেই। অভিযোগ, ট্রেন ধরার তাড়ায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই জোর করে উত্তরপত্র কেড়ে নিয়েছেন বেশ কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। শান্তিপুরের বাগআছড়া হাই স্কুলের ওই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকেরা।

সোমবার ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট। অভিযোগ, সে দিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক না থাকার সুযোগ নিয়ে ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে খাতা নিয়ে নেন ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তারপর পড়িমড়ি ছোটেন শান্তিপুর স্টেশনের উদ্দেশে। বাড়ি ফিরে পরীক্ষার্থীরা তা জানায় অভিভাবকদের। মঙ্গলবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েক জন অভিভাবক ওই শিক্ষকদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন এমনটা করেছেন, জানতে চাইলে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। অভিভাবকদের অভিযোগ, শুধু সোমবারেই নয়, বরাবরই বেশ কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ট্রেন ধরার জন্য স্কুল ছুটির আগেই বেরিয়ে যান। তা নিয়েও একাধিকবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু লাভ হয়নি। আর সেই প্রবণতাই বাড়তে বাড়তে একেবারে পরীক্ষা পর্যন্ত চলে এসেছে।

এমন অভিযোগ মানতে চাননি ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের দাবি, সোমবার তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ মিনিট আগে পরীক্ষা শুরু করেছিলেন। স্কুলের শিক্ষক মিঠুন সরকারের দাবি, ‘‘আমরা কিন্তু পনেরো মিনিট আগে পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছিলাম। আর পুরো বিষয়টিই জানেন প্রধান শিক্ষক। এটা তাঁরও সিদ্ধান্ত। যা শুনে চমকে উঠেছেন প্রধান শিক্ষক বিমানচন্দ্র বর্মন। তিনি বলছেন, ‘‘আমি এ সবের কিছুই জানি না। সে দিন স্কুলে এসেছিলাম। স্কুলেরই জরুরি কাজে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। মঙ্গলবার স্কুলে এসে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এমন কোনও সিদ্ধান্তের কথা আমার জানা নেই।” অভিভাবক সাধন ঘোষের অভিযোগ, ‘‘ওই শিক্ষকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন ধরার তাড়া। আর সেই জন্য ওঁরা যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন।” অভিভাবকদের অভিযোগ, শান্তিপুর থেকে দুপুর ২টো ২৭ মিনিটে শিয়ালদহগামী ট্রেন ছাড়ে। ২.১৫ এর পরীক্ষা শেষ করে খাতা জমা নিয়ে সেই ট্রেন ধরতে পারতেন না বলেই ওঁরা এমন কাণ্ড করেছেন। পরিচালন সমিতির সভাপতি সুষেন মণ্ডলও বলছেন, ‘‘শুধু এ দিনই নয়। কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা এমন কাণ্ড মাঝে মধ্যে করে থাকেন। এ বার বাধ্য হব তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Examination Student Teachers answer papers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE