ভাণ্ডারার লাইন। নিজস্ব চিত্র
উৎসবকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলতে নবদ্বীপের জুড়ি মেলা ভার। হাজার বছরের প্রাচীন এই শহরের জীবন-জীবিকার পরতে পরতে জড়ানো উৎসবের ঝলমলে পোশাক। উপস্থাপনার স্বকীয়তার গুণে রাধাকৃষ্ণের দোলপূর্ণিমা চৈতন্য জন্মস্থান নবদ্বীপে হয়েছে গৌরপূর্ণিমা। গৌরাঙ্গদেবের আবির্ভাব তিথি উদ্যাপনই নবদ্বীপের দোলের বিশেষত্ব।
শুক্রবার দেশ জুড়ে যখন হোলি, নবদ্বীপে শুধুই মহাপ্রভুর আবির্ভাব উৎসব। ৫৩৩ বছর আগে এক দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় নবদ্বীপে জন্মে ছিলেন নিমাই। অন্য বার দোলের দিন সকাল থেকে নবদ্বীপ জুড়ে চলে তাঁর মহাভিষেকের প্রস্তুতি। ফাল্গুন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠতেই মন্দিরে মন্দিরে শুরু হয় মহাপ্রভুর মহা অভিষেক পর্ব। উদ্যাপন চলে রাতভর। এ বারে তিথির হিসাবের কারণে শুক্রবার হল অভিষেক পর্ব। আজ, শনিবার দুপুরে গৌরাঙ্গদেবের অন্নপ্রাশন!
চৈতন্য আবির্ভাব তিথিকে কেন্দ্র করে উৎসব নবদ্বীপে কয়েকশো বছর ধরেই হয়ে আসছে। কিন্তু গত এক দশকে উৎসবের চেহারা অনেক বদলে গিয়েছে। দোলের আগের দিন থেকে পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট মণ্ডপে মহাপ্রভুর মূর্তি বসিয়ে সাড়ম্বরে চলে পুজো। বসে পাঠকীর্তনের আসর। প্রতিটি রাস্তা হয়ে ওঠে বৈষ্ণব নাটমন্দির। সেই সঙ্গে চলে প্রসাদ বিতরণ। স্থানীয় ভাবে যার নাম দেওয়া হয়েছে মহাপ্রভু ভাণ্ডারা।
দোল উপলক্ষে নবদ্বীপে ভিড় করেন লাখো মানুষ। পায়ে পায়ে তাঁরা ঘুরে বেড়ান চৈতন্যধামের গলি থেকে রাজপথ। দোলের দিন এবং পরের দিন শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে সেই সব বহিরাগত মানুষের জন্য নিখরচায় প্রসাদ বিতরণের বিপুল আয়োজনই মহাপ্রভু ভাণ্ডারা। মঠ-মন্দির ছাড়া কখনও যৌথ কখনও বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে, কখনও কোনও ক্লাব বা সংগঠনের উদ্যোগে প্রসাদ বিতরণের আয়োজন করা হচ্ছে।
নবদ্বীপের প্রবেশ পথ গৌরাঙ্গ সেতুর উপরে তিন দিন ধরে চলমান গাড়ির যাত্রীদের হাতে স্বেচ্ছাসেবকেরা তুলে দেন পাত্রে সাজানো পুষ্পান্ন, আলুর দম ও পায়েস। স্থানীয় বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা জানিয়েছেন, এ বারে প্রথম দিন লাড্ডু, দ্বিতীয় দিন পুষ্পান্ন এবং শুক্রবার খিচুড়ি, আলুর দম ও বোঁদে বিতরণ করা হয়েছে। খিচুড়ি, সব্জি, আলুর দম, লুচি, পোলাও, চাটনি, পায়েস, মিষ্টি থেকে চা, কফি, বিস্কুট, সরবত সবই থাকে ভাণ্ডারায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy