Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেমেয়ের কাছেই পাঠ বাবা-মায়ের

টিপ-ছাপ দেওয়া আর নয়। বরং যাতে তাঁরা সই করতে পারেন, তার জন্য অভিভাবকদের সাক্ষরতার পাঠ দিতে শুরু করেছে জোতকমল হাইস্কুলের খুদেরা। লজ্জা কাটিয়ে সব কাজ ফেলে সারা দিয়েছেন মায়েরাও।

শিক্ষক যখন নিজের মেয়ে। নিজস্ব চিত্র

শিক্ষক যখন নিজের মেয়ে। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

টিপ-ছাপ দেওয়া আর নয়। বরং যাতে তাঁরা সই করতে পারেন, তার জন্য অভিভাবকদের সাক্ষরতার পাঠ দিতে শুরু করেছে জোতকমল হাইস্কুলের খুদেরা। লজ্জা কাটিয়ে সব কাজ ফেলে সারা দিয়েছেন মায়েরাও।

জঙ্গিপুরের ওই স্কুলে ৫৩২ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১৩০ জনের অভিভাবক লিখতে-পড়তে পারেন না। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি শেষে সংখ্যাটা দেখেই চমকে উঠেছিল স্কুল। স্ট্যাম্প প্যাড সরিয়ে গত শনিবারই তাঁদের হাতে রুল-পেনসিল তুলে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের ৮০ জন কন্যাশ্রীযোদ্ধার সঙ্গে ৪৮ জনের শিশু কমিটির নেতৃত্বে থাকা ছাত্রীরাই সাক্ষরতার পাঠ দেবে টানা দু’মাস ধরে। প্রথম দিন হাজির ছিলেন ৮৪ জন নিরক্ষর অভিভাবক, যাঁদের স্কুলে নিয়ে এসেছিল সদ্য ভর্তি হওয়া ছেলেমেয়েরা। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হল স্কুলের তরফে প্রকাশিত একটি বই। এক ঘণ্টা ধরে চলে পাঠদান।

ফাদিলপুরের যমুনা ভাস্কর এসেছিলেন ছেলে শুভদীপের হাত ধরে। শুভদীপের স্পষ্ট কথা, “সবার বাবা-মা নাম লেখা শিখতে পারলে তুমিই বা পারবে না কেন?” মেয়ে ইয়াসমিন খাতুনের সঙ্গে এসেছিলেন নয়াচকপাড়ার সামো বিবি। তাঁর কথায়, “ছেলেমেয়েদের মান বাঁচাতে সই করাটা না শিখলেই নয়।”

ওসমানপুরের রফিক শেখের দুই ছেলে নেজাম ও মোকারিম পড়ে পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণিতে। দিনমজুর রফিক বলেন, “আমার স্ত্রী তরুন্নেসা বিবিও লিখতে-পড়তে জানে। ব্যাঙ্কে গিয়ে টিপ-ছাপ দিতে নিজেরও খুব লজ্জা করে। তাই চলে এলাম কাজ কামাই করে।” স্কুলের শিশু সংসদের পরিবেশ মন্ত্রী, অষ্টম শ্রেণির কামারুন্নেসা বলে, “আমাদের পড়শি সেতারা বিবি কাজ সামলে আসতে পারেননি স্কুলে। ওঁর নাম লিখে বাড়িতেই হাত বোলাতে দিয়ে এসেছি। পাড়ায় এ রকম জনা ছয়েক আছেন। প্রধান শিক্ষককে কথা দিয়েছি, এক মাসের মধ্যেই সকলে স্বাক্ষর করতে শিখে যাবেন। তার পর ঠিকানা, ইংরেজিতে নাম, সেগুলোও তো শেখাতে হবে!”

কোলের শিশুকে নিয়েই নতুন পুরাপাড়া থেকে এসেছেন রুবিয়া বিবি। দশম শ্রেণির ‘কন্যাশ্রী’ আজমাতুন্নেসার কাছে চেষ্টা করছেন নাম লেখা শিখতে। রুবিয়া বলেন, “বিয়ের আগে নাম লিখতে পারতাম। এখন ভুলে গেছি। একটু রপ্ত করলেই ঠিক পেরে যাব।” আজমাতুন্নেসা বলে, “দু’মাসের মধ্যে প্রত্যেকে যদি পাঁচ জন অভিভাবককে সাক্ষর করে তুলতে পারি, তা হলেই চলবে।”

প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সাহা বলেন, “গত বছর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সময়েই দেখা যায়, ৭০ জন অভিভাবকের অক্ষরজ্ঞান নেই। ঠিক করি, ভর্তির খাতায় কোনও মতেই টিপছাপ দিতে দেব না। বরং তাঁদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করে নিয়ে অভিভাবকদের অক্ষর শিখিয়ে মাস তিনেক পরে খাতায় স্বাক্ষর করাই। এ বারেও সেই চেষ্টাই চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE