প্রতীকী ছবি।
ফাল্গুনের দুপুরে সুনসান পাড়া। পুরুষেরা একে একে বাড়ি ফিরছেন। মহিলারা ব্যস্ত হেঁশেলে। আচমকা সমস্বরে চিৎকার, ‘আগুন লেগেছে গো...শিগ্গির এসো...।’ বালতি নিয়ে কেউ ছুটলেন কলতলায়। হাঁড়ি নিয়ে কেউ ছুটলেন পুকুরপাড়ে। কেউ আবার শ্যালো-পাম্প-পাইপ নিয়ে ছুটলেন কাছাকাছি জলাশয়ে। প্রথমে গলগল করে ধোঁয়া। তারপরে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল আগুন। একটার পরে একটা বাড়ি পুড়ে চলেছে। গোটা গ্রাম জুড়ে হইহই কাণ্ড। সকলেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। ফোন গিয়েছে পুলিশ ও দমকলে। পুলিশ চলে এসেছে। তাঁরাও নানা নির্দেশ দিচ্ছে। কিন্তু দমকলের দেখা নেই। গোটা এলাকা যখন পুড়ে ছাই, দূর থেকে শোনা যায় দমকলের ঘণ্টি। মরা ছাইয়ে জল ঢালা ছাড়া দমকলের আর তেমন কিছুই করার থাকে না।
নদিয়া-মুর্শিদাবাদে এ অভিজ্ঞতা বহু গ্রামের। অভিযোগ, কখনও সময়ে আসে না দমকলের কর্মীরা। কখনও দমকল কেন্দ্র এতটাই দূরে যে, সেই দীর্ঘ পথ উজিয়ে আসতে আসতে আগুন নিভে যায়। কোথাও আবার দমকল কেন্দ্র কাছে হলেও কর্মী কিংবা গাড়ির অভাবে বিপদ সামাল দেওয়া যায় না। শীতলনগরে যেমনটা হয়েছিল। সেখানে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ফোন গিয়েছিল বহরমপুর দমকল কেন্দ্রে। শীতলনগর থেকে বহরমপুরের দূরত্ব প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটারেরও বেশি। সেখান থেকে দমকলের ইঞ্জিন এসে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এ দিকে ডোমকল বা লাগোয়া এলাকায় দমকল কেন্দ্র নিয়ে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বহরমপুরে উদ্বোধন করেছেন ডোমকলের দমকল কেন্দ্র। দমকলের জন্য সিংহভাগ পরিকাঠামো তৈরি থাকলেও চালু হয়নি। ফলে আগুন লাগলে ভরসা দূরের বহরমপুর কিংবা করিমপুরের দমকল কেন্দ্র। ডোমকলের বাসিন্দা আফজাল মণ্ডলের কথায়, ‘‘ডোমকল মহকুমা সদর হওয়ার পর থেকেই শুনছি ডোমকলে দমকল কেন্দ্র হবে। সেটা চালু হলে শীতলনগর, মেহেদিপাড়া বা কুচিয়ামোড়ায় এত বড় ক্ষতি হত না।’’ ডোমকলের পুরপ্রধান তৃণমূলের সৌমিক হোসেনের আশ্বাস, ‘‘খুব শীঘ্র ওই দমকল কেন্দ্র চালু হয়ে যাবে।’’ সমস্যাটা একই রকম বেথুয়াডহরিতেও। পরিকাঠামো তৈরি। ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণনগর থেকে সেই দমকল কেন্দ্রের উদ্বোধনও করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “শীঘ্র সেটি চালু করা হবে। সমস্যা অনেকটাই কমবে।’’
যেখানে দমকল চালু রয়েছে সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী কম। শান্তিপুরে ফায়ার অপারেটর থাকার কথা ১৮ জন। আছেন ৮ জন। আধিকারিক ৪ জনের জায়গায় দু’জন। কৃষ্ণনগরে ফায়ার অপারেটর থাকার কথা ৩৬ জন। আছেন দশ জন। চালক থাকার কথা ১৬ জন। আছেন ৯ জন। নবদ্বীপেও ইঞ্জিন-সহ কর্মী বাড়ানোর দাবি রয়েছে। সে দাবি মিটবে কবে? উত্তর মেলে না। শুধু তপ্ত দুপুরে দপ করে জ্বলে ওঠে পাড়া বা ফসল। দূরে শোনা যায় দমকলের ঘণ্টি!
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy