Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

খিচুড়িকে সরিয়ে পাত মাতাচ্ছে ফ্রায়েড রাইস

তিনি বলছেন, ‘‘সে এক কাণ্ড হয়েছিল। আমার সেই খাওয়া দেখে স্কুলবেলাতে অনেকে আমাকে পেটুক বলেও রাগাত। সে সব মিঠে স্মৃতি আজীবন অমলিন থাকবে।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

প্রাথমিক স্কুলে সরস্বতী পুজোর ছাত্রভোজ। খিচুড়ি, আলুর দম, চাটনি। শেষপাতে পায়েস। আয়োজন সাদামাটা কিন্তু ব্যবস্থা ঢালাও। স্কুলের ছাত্র নিত্যানন্দ সে দিন এমন খেয়েছিলেন যে, দীর্ঘক্ষণ আসন থেকে উঠতেই পারেননি। সহপাঠীরা তাঁকে নিয়ে সে দিন হইচইও করেছিলেন খুব। পঞ্চাশ বছর পরেও সেই মহাভোজের কথা আজও মনে আছে নবদ্বীপের নিত্যানন্দ মহাপাত্রের। তিনি বলছেন, ‘‘সে এক কাণ্ড হয়েছিল। আমার সেই খাওয়া দেখে স্কুলবেলাতে অনেকে আমাকে পেটুক বলেও রাগাত। সে সব মিঠে স্মৃতি আজীবন অমলিন থাকবে।’’

সে কালে স্কুলে সরস্বতী পুজোর ভোজের মেনুতে থাকত খিচুড়ি, তরকারি (বাঁধাকপি, ল্যাবড়া অথবা আলু ফুলকপি), চাটনি কিংবা লুচি আলুর দম ও বোঁদে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভোজের আয়োজন করা হতো পুজোর দিন। কোথাও পরের দিন প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে খাওয়া-দাওয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরস্বতী পুজোর ছাত্রভোজের মেনুতে এসেছে বদল। খিচুড়ির জায়গা নিচ্ছে ফ্রায়েড রাইস, জিরা রাইস, রকমারি পোলাও। সঙ্গে ভেজিটেবল চপ, পনির পসিন্দা কিংবা বেগুনি। আলুর দমকে হারিয়ে দিচ্ছে ছানা, ধোঁকার ডালনা, পনিরের তরকারি। সঙ্গে মিক্সড ফ্রুট চাটনি। শেষ পাতে নলেনগুড়ের মিষ্টি বা আইসক্রিম।

বদলে গিয়েছে ছাত্রভোজের দিনক্ষণও। এখন বহু স্কুলে পুজোর দিন খাওয়াদাওয়া নৈব নৈব চ। কমপক্ষে পুজোর দু’-তিন দিন পরে ভোজের আয়োজন হচ্ছে ক্যাটারিং ডেকে। কোথাও হপ্তাখানেক পরে। অথচ বছর তিরিশ-পঁয়ত্রিশ আগেও ছবিটা ছিল আলাদা। নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শান্তিরঞ্জন দেব জানাচ্ছেন, প্রায় সব স্কুলেই দু’একজন উৎসাহী শিক্ষক থাকতেন যাঁরা রান্নার পাশাপাশি পুরো খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটা সামলাতেন। খাওয়ানোর দিন প্রাক্তনীরাও পরিবেশনে হাত লাগাতেন। বড় স্কুলে রান্না করতেন ঠাকুর।

কিন্তু এখন আর এমন দৃশ্যের দেখা মেলা ভার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচি-স্বাদ সব কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে প্রচলিত প্রথাও। চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমির প্রধানশিক্ষক আনন্দময় মণ্ডল জানান, তাঁর স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ২৪০০। তাদের জন্য এ বারে সরস্বতীপুজো উপলক্ষে ভোজের মেনুতে ছিল ফ্রায়েড রাইস, আলুর দম, চাটনি, বোঁদে। রানাঘাট ভারতী হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুমন বিশ্বাস জানাচ্ছেন, তাঁদের মেনু ছিল ফ্রায়েড রাইস, আলুর দম, চাটনি ও রসগোল্লা।

কান্দির জেমো নরেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক সূর্যেন্দু দে জানান, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত বারেই সরস্বতীর ভোজে পোলাও হয়েছিল। কিন্তু বিপুল অতিথি সামলাতে হিমশিম খেয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ বার তাই ফের খিচুড়ির ব্যবস্থা হয়েছে। তবে সে খিচুড়ি পোলাওয়ের থেকে কিছু কম স্বাদু নয়। কামিনীভোগ চাল আর সোনামুগের ডালের সঙ্গে খাঁটি গাওয়া ঘি। বেলডাঙার হরিমতি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে এ বার সরস্বতী পুজোর ভোজের মেনু ছিল এক্কেবারে মাংস ভাত। ওই স্কুলেরই উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রীদের জন্য ছিল ফ্রায়েড রাইস, পাঁচ তরকারি, ডাল, টোম্যাটোর চাটনি, দু’রকম মিষ্টি আর নলেনগুড়ের পায়েস। কাশিমবাজার রাজ গোবিন্দসুন্দরী বিদ্যাপীঠের ভোজে ছিল ডাল, আলু ফুলকপির তরকারি, ফ্রায়েড রাইস, চাটনি, নলেনগুড়ের রসগোল্লা। নবদ্বীপ পুরানো স্কুল আরসিবি সারস্বত মন্দিরে আজ, বৃহস্পতিবার সরস্বতী পুজোর ভোজ। সেখানে মেনু ফ্রায়েড রাইস, আলুর দম, চাটনি আর বোঁদে। বুধবার রাতে স্কুলে তৈরি হচ্ছে একশো কেজি বোঁদে। প্রধানশিক্ষক বিজনকুমার সাহা বলছেন, ‘‘এটা দীর্ঘ দিনের প্রথা। অনান্য পদ বদলে গেলেও স্কুলে বোঁদে তৈরির ধারাটা এখনও বজায় রয়েছে।”

বহরমপুরের সৈয়দাবাদ মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জসীমউদ্দিন আহমেদ জানাচ্ছেন, এ বারও পোলাও, আলুর দমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি খাওয়াদাওয়া হবে। লালবাগের কুতুবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহামুদাল হাসান বলেন, “মিড ডে মিলে পড়ুয়ারা খিচুড়ি খায়। তাই ২ ফেব্রুয়ারি ফ্রাইড রাইস, আলুর দম, বোঁদের ব্যবস্থা হয়েছে।

নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE