Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হাতে ফুটেজ, ঘিরছে জাল

চাকদহে জলসার মঞ্চে গুলি ছুড়ে স্থানীয় ‘কল্পান্ত’ ক্লাবের সম্পাদক তথা যুব তৃণমূল কর্মী শান্তনু শীলকে খুনের কথা ইতিমধ্যে কবুল করে নিয়েছে কালু।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৫
Share: Save:

মূল অভিযুক্তকে সাত দিন নিজেদের হেফাজতে রেখেও বাকিদের ধরতে পারেনি পুলিশ। মঙ্গলবার তাদের আর্জিতে সাড়া দিয়ে কল্যাণী আদালত অমন রায় ওরফে কালুকে ফের তিন দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠাল।

চাকদহে জলসার মঞ্চে গুলি ছুড়ে স্থানীয় ‘কল্পান্ত’ ক্লাবের সম্পাদক তথা যুব তৃণমূল কর্মী শান্তনু শীলকে খুনের কথা ইতিমধ্যে কবুল করে নিয়েছে কালু। কিন্তু যে পিস্তল থেকে সে গুলি ছুড়েছিল সেটির হদিস মিলছিল না। পুলিশ সূত্রের দাবি, সোমবার রাতে কালুকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে রবীন্দ্রনগর এলাকায় রাজ্য সড়কের ধার থেকে পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়। খুন করে পালানোর সময়ে কালু সেটি ঝোপের মধ্যে ফেলে গিয়েছিল।

এতে পুলিশের যা-ও বা মুখরক্ষা হয়েছে, বাকি চার ফেরার অভিযুক্তকে ধরাটাও যে জরুরি তা পুলিশকর্তারা মানছেন। কিন্তু তারা সম্ভবত রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছে। সেই সঙ্গে জেলার কিছু ক্ষমতাসীন নেতা তাদের আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, চার জনের মধ্যে অন্তত দু’জন হাতের নাগালে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা। নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘আমাদের দল অন্য রাজ্যে গিয়েছে। বুধবার হয়তো একটা খবর পাবেন।’’

গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে চাকদহে কেবিএম এলাকায় খুন হন শান্তনু। তাঁর স্ত্রী অভিযোগে কালু ছাড়াও তার দাদা সুমন রায় ওরফে হাম্পি, গৌতম মণ্ডল ওরফে পুচু, বিশ্বনাথ দেবনাথ ও বিশ্বজিৎ ঘোষ ওরফে ছ্যাঁকা বিশুর নাম জানিয়েছেন। খুন করে চলে যাওয়ার সময়ে কালু শূন্যেও গুলি ছুড়েছিল বলে তিনি জানান।

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তাদের হাতে ইতিমধ্যে একটি ভিডিও এসে পৌঁছেছে। খুনের সময়ে কেউ মোবাইলে ছবি তুলেছিল। তাতে কালু ছাড়াও অনেককে দেখা যাচ্ছে। পুলিশ সেই ফুটেজ যাচাই করছে। এর মধ্যে সত্যিই যদি কোনও ফেরার অভিযুক্ত তাদের হাতে চলে আসে, তাকে কালুর মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে। সেই জন্যই তাকে ফের পাঁচ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়েছিল পুলিশ। এসিজেএম সুজয় বল তিন দিন মঞ্জুর করেন। এ দিন দুপুরে কালুকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে হাজির হন চাকদহ থানার আইসি তথা এই মামলার তদন্তকারী অফিসার পিন্টু সরকার। বেলা ৩টে নাগাদ এজলাসে ডাক পড়ে। এ দিনই দুই প্রত্যক্ষদর্শী, ‘কল্পান্ত’ ক্লাবের সদস্য কালু দাস এবং মাইকের দায়িত্ব থাকা বিট্টু চন্দকে এনে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রামপদ ঘোষের কাছে জবানবন্দি দেওয়ানো হয়। এক দিকে রাজনৈতিক চাপ, অন্য দিকে পুলিশি জেরা-তল্লাশি চলতে থাকায় এলাকায় কেউই বিশেষ মুখ খুলতে আগ্রহী নন। ‘কল্পান্ত’ ক্লাবের সভাপতি বাচ্চু দেব বলেন, “শরীর খারাপ থাকায় আমি ওখানে যাইনি। গুলির শব্দ শুনে গিয়ে দেখি, লাইট আর প্যান্ডেলের লোক ছাড়া সবাই পালিয়ে গিয়েছে।’’

সকালেই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে আদালতে চলে গিয়েছিলেন কালুর মা রুনু রায়। তবে কালুর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় সঙ্গে যাননি। গোড়া থেকেই রুনু দাবি করছিলেন, কালুকে তিনি ধরিয়ে দিয়েছেন। এ দিন আদালত চত্বরে এসে কেঁদে ভাসান তিনি। বলতে থাকেন, ‘‘আমিই তো ছেলেটাকে আত্মসমর্পণ করালাম। এই ছিল আমার কপালে!’’ ‘ছোট ছেলেই খুন করেছে’, এ কথা বারবার বলার পাশাপাশি বড় ছেলে হাম্পি ‘নির্দোষ’ বলেও আগাগোড়া দাবি করে আসছেন রুনু। পুলিশ কিন্তু হাম্পিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

(সহ প্রতিবেদন: সৌমিত্র সিকদার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE