Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

খেলা দেখতেও হেলমেট! সীমান্ত অবাক

তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, হেলমেট ছাড়া মাঠে ঢোকা যাবে না। যা শুনে ফুটবল পাগল মিরাজুল, বিপ্লবের মাথায় হাত।

হেলমেট নেই, তাই আটকে দেওয়া হল এক মোটরবাইক আরোহীকে। নিজস্ব চিত্র

হেলমেট নেই, তাই আটকে দেওয়া হল এক মোটরবাইক আরোহীকে। নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন
রানিনগর  শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

চোখে রোদচশমা। পরনে শখের তাপ্পি মারা জিন্‌স। বাংলাদেশের কোল ঘেঁষা সেই চরের গাঁ থেকে মোটরবাইকে রানিনগর থানার মাঠে খেলা দেখতে এসেছিলেন দুই বন্ধু, মিরাজুল শেখ ও বিপ্লব মণ্ডল। রেফারির বাঁশি আর দর্শকদের হইচই শুনে তড়িঘড়ি মাঠে ঢুকতে যাবেন, ঠিক তখনই হাত উঁচু করে পথ আটকাল দুই সিভিক ভলান্টিয়ার।

তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, হেলমেট ছাড়া মাঠে ঢোকা যাবে না। যা শুনে ফুটবল পাগল মিরাজুল, বিপ্লবের মাথায় হাত। তাঁরা তো হেলমেট পরেননি। ওই দুই যুবকের আবদার, ‘‘সেই চর থেকে আসছি ফুটবল খেলা দেখব বলে। আজকের মতো ছেড়ে দিন। কথা দিচ্ছি, ফাইনালের দিন হেলমেট পরেই আসব।’’ কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়াররা জানিয়ে দেয়, তাদের কিছু করার নেই। উপর থেকে এমনটাই নির্দেশ রয়েছে।

অগত্যা থানার মাঠের পাঁচিলের গায়ে বাইক রেখে সিটের উপরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে হয়েছে ওই দুই যুবককে। কেবল ওঁরাই নন, রানিনগর থানার উদ্যোগে সীমান্ত সম্প্রীতি কাপের খেলা দেখতে এসে এমন হোঁচট খেতে হয়েছে বহু লোকজনকে। কেউ বাইক দূরে কোথাও রেখে হেঁটে মাঠে ঢুকেছেন। কেউ হেলমেট ধার করে এনে মাঠে ঢুকেছেন। কেউ আবার বাইক রেখে চড়ে বসেছেন গাছের ডাল কিংবা অ্যাম্বুল্যান্সের মাথায়।

রানিনগরের কাহারপাড়ার বাসিন্দা বাবু মণ্ডলের কথায়, ‘‘এ কী বিপদ, বলুন তো! সারা রাস্তা হেলমেট ছাড়াই চসে এলাম। কেউ কিছু বলল না। আর যাদের খেলা দেখতে এলাম, সেই থানার পুলিশই হেলমেট না থাকলে মাঠে ঢুকতে দিচ্ছে না। ফাইনালে এই ভুল আর করছি না। হেলমেট পরেই আসব।’’

পুলিশের দাবি, তারা ঝোপ বুঝেই কোপ মেরেছে। সীমান্তের এই এলাকা ফুটবল বলতে পাগল। ঘেরা মাঠে ঢোকার পথও একটাই। ফলে হেলমেট ছাড়া কারও মাঠে ঢোকার জো নেই। আর এই পদ্ধতিতে কাজও হয়েছে বলে দাবি রানিনগরের ওসি অরূপ রায়ের। তাঁর কথায়, ‘‘খেলার প্রথম দিন থেকেই আমরা এটা শুরু করেছি। যাঁরা বাইক চালান, তাঁদের অনেকেই এখন হেলমেট পরে মাঠে আসছেন। ফাইনালের দিন পর্যন্ত সব বাইক আরোহীকে হেলমেট পরিয়েই ছাড়ব।’’

পুলিশের দাবি, নানা ভাবে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। তার পরেই সবার মাথায় হেলমেট ওঠানো যাচ্ছে না। লোকজন নিজের ভাল না বুঝলে কী করে হবে? নভেম্বরের শেষ থেকেই বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ফুটবল উৎসব। এরপরে রয়েছে যাত্রা, নাইট। সেখানেও বহু লোকজন ভিড় করবেন। ফলে হেলমেট পরানোর এটা মোক্ষম সময়।

তবে পুলিশের এমন ভাল উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে পারছেন না অনেকেই। তাঁদের কথায়, ‘‘হেলমেট নেই বলে খেলা দেখা যাবে না, এটা কেমন নিয়ম বলুন তো?’’ যা শুনে হাসছেন এক পুলিশকর্মী, ‘‘হেলমেটহীন মাথায় বাইক চালানোর সময় কিছু একটা হয়ে গেলে খেলা দেখা তো দূরের কথা, চালকের নিজের খেলাই সাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। তখন কী হবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Bike Helmet Awareness
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE