Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফের গাফিলতির নালিশ প্রসূতি মৃত্যু, ঠিকানা সেই নার্সিংহোমই

মাধবীর শ্বশুরবাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়া। বাপের বাড়ি ধানতলার দত্তপুলিয়ায়। সোমবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে মাধবীকে রানাঘাটের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন বিকালে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৪
Share: Save:

নাড়িকাটার বিদ্যেই তাদের জানা নেই— রানাঘাটের ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগটা উঠছিল বছর কয়েক ধরেই।

গত এপ্রিলে, দু’দিনের ব্যবধানে মারা গিয়েছিলেন দুই তরুণী। গাফিলতির অভিযোগে ভাঙচুর, মৃতদেহ নিয়ে নার্সিংহোমের সামনে অবরোধ— গণ্ডগোল কম হয়নি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে তখনকার মতো বন্ধও করে দেওয়া হয়েছিল রানাঘাটের চৌরঙ্গি এলাকার অ্যাভিনিউ নার্সিংহোম। তবে মজার ব্যাপার, মাস ঘুরতেই ফের ছাড়পত্র জোগাড় করে খুলে গিয়েছিল সেই নার্সিংহোমের দরজা।

তবে, রোগ যে সারেনি মালুম হল মঙ্গলবার। সেই একই ঘটনা, প্রসবের পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেলেন এক সদ্য-মা। সোমবার মাধবী শাসমল (২৩)-এর কন্যা সন্তান জন্মানোর পরেই শুরু হয় রক্তক্ষরণ। মঙ্গলবার সকালেই মারা যান তিনি। তাঁর সদ্যোজাত মেয়েটিকে ভর্তি করানো হয়েছে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। ওই ঘটনার পরে, রানাঘাট থানায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এবং হাসপাতালের চিকিৎসক নীলাঞ্জন মিত্রের অভিযোগ দায়ের করেছেন মাধবীর বাড়ির লোকজন।

অভিযুক্ত নীলাঞ্জন মিত্র অবশ্য বলেন, “আমার কোনও গাফিলতি ছিল না। প্রসব হওয়ার দু’-তিন ঘণ্টার মধ্যে এই ধরনের সমস্যা হয়। সব রকমের চেষ্টা করা হয়েছিল।”

মাধবীর শ্বশুরবাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়া। বাপের বাড়ি ধানতলার দত্তপুলিয়ায়। সোমবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে মাধবীকে রানাঘাটের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন বিকালে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর পর থেকেই তাঁর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাঁর ননদ অনিতা দাস বলেন, “আমি মাধবীর কাছে গিয়ে দেখি রক্তে বেড ভেসে যাচ্ছে। তাঁকে একটা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। কিন্তু, তাতেও কোন কাজ হয় নি।’’ অনিতার অভিযোগ, ‘‘ডাক্তারবাবুকে বারবার বলি, কিছু করুন। রক্ত লাগলে বলুন। উত্তর পাই, ছ’ঘণ্টা না হলে কী করে বলব?’’ অভিযোগ, এর কিছুক্ষণ পরে তিনি মাধবীর বাড়ির লোককে ডেকে বলেন, ‘‘বাঁচানো গেল না।” মাধবীর স্বামী রবীন্দ্রনাথ শাসমল বলেছেন, “গত তিন মাস ধরে নীলাঞ্জন মিত্র আমার স্ত্রীকে দেখছেন। তার কী সমস্যা, সেটাই বুঝতে পারেননি তিনি। ওঁর গাফিলতিতেই স্ত্রীকে হারালাম।”

গত এপ্রিলে পর পর দুই প্রসূতি মৃত্যুর পরে বসেছিল তদন্ত কমিটি। মে মাসের ১৬ তারিখ ওই নার্সিংহোম বন্ধের নির্দেশ দেয় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু ১৮ জুলাই ফের তা খুলল কি করে? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “প্রশিক্ষিত নার্স ও কর্মী না থাকায় নার্সিংহোম বন্ধ করা হয়েছিল। সেই ঘাটতি পূরণ হওয়ায় ফের তা খোলার অনুমতি দেওয়া হয়।” তবে নার্সিংহোম মালিক অঞ্জনা কুণ্ডু বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই নার্সিংহোম খোলা হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE