Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গি-দাপট, প্রশ্ন সরকারি হিসাব নিয়ে

পরিবারের দাবি, তাঁর ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল। নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের দাবি, চলতি মরসুমে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হাজার দুই। কিন্তু কারও মৃত্যু হয়নি। ফলে, সরকারি হিসেব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ ও বিমান হাজরা
হরিণঘাটা ও ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০০
Share: Save:

মাসখানেক ধরে ঘরে-ঘরে জ্বর। তার সবই হয়তো ডেঙ্গি নয়। কিন্তু কিছু এলাকায় ডেঙ্গির দাপট যে রয়েছে, তা প্রশাসনের কর্তারাও কবুল করছেন। বৃহস্পতিবারই হরিণঘাটার এক প্রৌঢ়া মারা গিয়েছেন কলকাতায়। পরিবারের দাবি, তাঁর ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল। নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের দাবি, চলতি মরসুমে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হাজার দুই। কিন্তু কারও মৃত্যু হয়নি। ফলে, সরকারি হিসেব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

নদিয়া জেলা প্রশাসনের হিসেবেই অন্তত গোটা সাতেক ব্লক ডেঙ্গিপ্রবণ। তার মধ্যে প্রথম সারিতে হরিণঘাটা। মুর্শিদাবাদে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা জলবন্দি ধুলিয়ানে। শহর থেকে জমা জল সরাতে ২৫টি পাম্প বসানো হয়েছে। তবুও জল সরানো যায় নি। হরিণঘাটা শহরে ততটা প্রাদুর্ভাব না হলেও ডেঙ্গি থাবা বসিয়েছে গ্রামাঞ্চলে। বিশেষ করে নগরউখড়া-২ পঞ্চায়েত এলাকায়। বিজয়া দশমীর দিন উত্তর চান্দা এলাকার বাসিন্দা অমিত গায়েন উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা হাসপাতালে মারা যান। তাঁরও ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল বলে পরিবারের লোকজনের দাবি। জেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ বিষয়ক কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল দেবনাথ জানান, ওই এলাকার আশপাশেও জ্বর ছড়াচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, কেবল মাত্র হরিণঘাটা ব্লকেই গত কয়েক মাসে শতাধিক লোকের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। আক্রান্তেরা প্রধানত স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতাল বা কাছেই হাবরা হাসপাতালে যাচ্ছেন। কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে এখন অন্তত শ’দুয়েক জ্বরের রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যেও কয়েক জন হরিণঘাটার বাসিন্দা। হাসপাতাল সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘হুগলি থেকেও জ্বরে আক্রান্তেরা আসছেন।’’

ধুলিয়ান পুরসভা ও ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, জ্বর চললেও ডেঙ্গির প্রকোপ অনেকটাই কমেছে। যদিও তা মানতে নারাজ ধুলিয়ানের বাসিন্দা ও সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তোয়াব আলি। তাঁর অভিযোগ, বস্তি এলাকায় অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় প্রতিটি পরিবারে জ্বর। স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্তাদের ভয়ে ডেঙ্গির কথা বলতে বা লিখতে পারছেন না। ফলে প্রশাসন যে হিসেব দিচ্ছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ধুলিয়ানের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে একই বাড়িতে সাহানাজ খান, ফতেমা বিবি, মোস্তাক শেখের জ্বর পাঁচ দিন ধরে না ছাড়ায় তাঁরা ভর্তি হয়েছেন বহমপুরের এক নার্সিংহোমে। সাহানাজের দাবি, ‘‘রক্ত পরীক্ষায় বলা হয়েছে, তিন জনেরই ডেঙ্গি। সরকারি হাসপাতালে গেলে ডেঙ্গি কি না বিতর্কে চিকিৎসাই হবে না হয়তো। তাই নার্সিহোমে ভর্তি হয়েছি।’’ ১১ নম্বর ওয়ার্ডে একই বাড়ির সামির, সাহিদ ও বাদিরুদ্দিন মহলদারের ছ’দিন ধরে জ্বর। সামির বলেন, ‘‘মালদহের নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছি। ধরা পড়েছে ডেঙ্গি।’’

ধুলিয়ান শহর ও সমশেরগঞ্জে ১৯০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে যা মুর্শিদাবাদে সর্বাধিক। সমশেরগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক গোলাব হোসেন বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা এলাকায় যাচ্ছেন। কিন্তু বহু বাড়িতে বৃষ্টির জল জমে।’’ ধুলিয়ান পুরপ্রধান, তৃণমূলের সুবল সাহা বলেন, “জমা জলে ডুবে রয়েছে ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড। এই কারণেই জ্বরের প্রকোপ থামানো যাচ্ছে না। সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে কেরোসিন, ব্লিচিং, মশা মারা তেল কেনা হয়েছে।’’

হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে দাবি করা হয়, প্রতিটি এলাকাতেই ভল্যানটিয়ার বাহিনী গড়া হয়েছে। তারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জমা জল সরানোর কথা বলছে। মশানাশক তেল ও ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE