Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ভিন্ রাজ্যে মায়ের ফোন

সাবধানে থাক বাপ

ডোমকলে সাহাবাজপুরের সামিম মণ্ডল কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। নাতির স্মার্টফোনে রাজস্থানের ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছেন তাঁর মা জাহেরা বেওয়া। ছেলেকে ফোন করে বলেছেন, ‘দিনকাল ভাল নয়। কাজের পরে এ দিক-ও দিক না ঘুরে সোজা বাসায় ফিরে যাবি।”

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৪
Share: Save:

টিভিতে খবরটা দেখেই শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত নেমে গিয়েছিল শোনডাঙার ফজর আলি মল্লিকের। ছোট ছেলে আসিফ ইকবাল মল্লিক যে হোটেলের কাজ নিয়ে রাজস্থানেই গিয়েছে মাস দেড়েক আগে!

‘লাভ জিহাদে’র ছুতো তুলে একটা গরিব মানুষকে কুপিয়ে মেরে পুড়িয়ে দিল লোকটা! এ কি মানুষ?

তড়িঘড়ি ছেলেকে ফোন করেন ফজর আলি— “কেমন আছিস বাপ? সব ঠিকঠাক তো?” পাশে বসে স্ত্রী সার্জিনা বিবি কাঁদছেন নাগাড়ে। খালি বলছেন, “ওকে চলে আসতে বলো। না খেয়ে থাকব। বেঘোরে তো মরবে না অন্তত!” আসিফ যতই অভয় দেন, বুড়ো বাপ-মায়ের মন মানে না।

ফজর বলেন, “অজমের শরীফের কাছেই একটা হোটেলে কাজ করে ও। জানি না তো জায়গাটা কেমন!” ওঁদের বড় ছেলে জাহির আব্বাস মল্লিকও মুম্বইয়ে একটি হোটেলে কাজ করে। তাঁকেও তাঁরা ফোন করে ফিরে আসতে বলেছেন। নদিয়া-মুর্শিদাবাদে এমন বাপ-মা যে কত, তার ইয়ত্তা নেই। দুই জেলার বহু মানুষই নানা রকম কাজে ছড়িয়ে আছেন দেশ জুড়ে।

ডোমকলে সাহাবাজপুরের সামিম মণ্ডল কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। নাতির স্মার্টফোনে রাজস্থানের ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছেন তাঁর মা জাহেরা বেওয়া। ছেলেকে ফোন করে বলেছেন, ‘দিনকাল ভাল নয়। কাজের পরে এ দিক-ও দিক না ঘুরে সোজা বাসায় ফিরে যাবি।”

মাস তিনেক আগে কুয়েতে কাজ করতে গিয়েছেন মালিয়াপোতার আসিফ ইকবাল শেখ। তারও মাস ছয়েক আগে সৌদি আরবে গিয়েছেন তাঁর ভাই লতিফ শেখ। দু’জনেরই স্ত্রী রয়েছেন বাড়িতে। প্রায় রোজই দু’জন ফোন করেন। আর মা হাজিরা বিবি খুঁটিয়ে জানতে চান, ‘কেমন আছিস? তোদের ওখানে কোনও গণ্ডগোল নেই তো? কবে বাড়ি ফিরবি বাপ?” ছেলেরা বলে, ‘চিন্তা কোরো না। সব
ঠিক আছে এখানে।’ মা বলেন, ‘এ দিকে টিভিতে যে কী সব ছাইপাঁশ দেখাচ্ছে, মনটা অস্থির হয়ে উঠেছে।”

ডোমকলের হরিডোবার নুরজাহান বিবির স্বামী কবিরুল ইসলাম কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন বছর পাঁচেক হল। নুরজাহান বলেন, “আমিই প্রথম ফোন করে ওঁকে রাজস্থানের ঘটনার কথা জানাই। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছি। রোজ সকাল-সন্ধে ফোন করে খবর নিচ্ছি।” স্বামী যেন একা কোথাও না বেরোন, পইপই করে রোজ সে কথাও বলে দেন তিনি।

রানাঘাটের রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দে কাতারে হোটেলে কাজ করেন। তাঁর বাবা বিশ্বনাথ দেও পড়ে গিয়েছেন চিন্তায়। তিনি বলেন, “যা দেখলাম, তাতে চিন্তা না হওয়ায়ই আশ্চর্যের। ছেলে ফিরে আসুক। না হয় নুন-ভাত খেয়েই থাকব।”

বেলডাঙা মির্জাপুরের রশ্মি বিবির ছেলে সাহেব শেখ আড়াই বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করছেন। তিনিও ছেলেকে বলে দিয়েছেন, সব সময় যেন সচিত্র পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখে। খুব প্রয়োজন ছাড়া যেন একা ঘর থেকে না বেরোয়।

উন্মত্ত কিছু মানুষ যে সময়টাকে বদলে দিতে চাইছে, তা তাঁরা ভুলে থাকেন কী করে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajasthan Love Jihad Mother Son
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE