আদালত-চত্বরে: পুলিশি হেফাজতে ছ্যাঁকা বিশু ও পুচু। বৃহস্পতিবার কল্যাণীতে। নিজস্ব চিত্র
শান্তনু শীল খুন হওয়ার পরেও দু’দিন এলাকাতেই গা-ঢাকা দিয়ে ছিল ছেঁকা বিশু আর পুচু। কিন্তু পুলিশ তাদের আত্মসমর্পণ করানোর জন্য বাড়িতে চাপ দিতে থাকায় তারা পালায়। ভেবেছিল, দিল্লিতে গিয়ে পুচুর এক বন্ধুর ডেরায় গিয়ে উঠবে। কিন্তু তার আগেই মঙ্গলবার কানপুরে পুলিশ তাদের পাকড়াও করে। জেরায় তারাই এই বৃত্তান্ত জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরেই ছ্যাঁকা বিশু ওরফে বিশ্বজিৎ ঘোষ ও পুচু ওরফে গৌতম মণ্ডলকে নিয়ে কল্যাণী থানায় আসে পুলিশ। মামলাটি যদিও চাকদহ থানার। সেখানকার আইসি পিন্টু সরকারই তদন্তাকারী অফিসার। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি কল্যাণী থানায় এসে দু’জনকে নিয়ে আদালতে যান। পুলিশ তাদের ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এসিজেএম-২ সন্দীপ কুণ্ডু ৯ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি চাকদহের কেবিএম এলাকায় সকলের সামনেই জলসার মঞ্চে শান্তনুকে গুলি করে কালু। সেই সময়ে তার দাদা সুমন রায় ওরফে হাম্পি, বিশ্বনাথ দাস, বিশ্বজিৎ ও গৌতম— এই চার জন তার সঙ্গে ছিল শান্তনুর স্ত্রী সোমা পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন। খুনের মূল অভিযুক্ত অমন রায় ওরফে কালু পুলিশের হেফাজতেই রয়েছে। তার মুখোমুখি ওই দু’জনকে বসিয়ে জেরা করবে পুলিশ। কিন্তু হাম্পি আর বিশ্বনাথের এখনও খোঁজ নেই। তারা আলাদা পালিয়েছিল বলে গৌতমেরা পুলিশকে জানিয়েছে।
বিশ্বজিৎ আর গৌতমের আসলে কাল হয়ে গিয়েছিল একটি মোবাইল। পুলিশ সূত্রের খবর, বিশ্বজিৎ এলাকা ছেড়ে পালানোর আগে তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ঝুমার মোবাইলের সিম খুলে নিয়ে গিয়েছিল। কিছু দিন আগে ঝুমা ওই সিমটি নিয়েছিলেন। রাজ্য ছাড়ার পর সেটি দিয়ে স্থানীয় কয়েক জনের মারফত বিশ্বজিৎ বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল। পুলিশ যে সিম নম্বর জেনে গিয়েছে এবং টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করা হচ্ছে, তা তার ধারণায় ছিল না। ঝুমা এ দিন কল্যাণী আদালতে এসেছিলেন। লকআপে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার সময়ে কেঁদেও ফেলেন তিনি। তাঁর দাবি, ওই খুনের সময়ে বিশ্বজিৎ মেয়ের বিয়ের পাকা কথা বলতে গিয়েছিল। চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষের সঙ্গে পুরপ্রধান দীপক চক্রবর্তীর দ্বন্দ্বের জেরে তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ঝুমা দাবি করেন। আদালতে এসেছিলেন গৌতমের দাদা সুব্রত মণ্ডলও। তিনিও দাবি করেন, ‘‘ঘটনার সময়ে আমার ভাই ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভায় ছিল। বিধায়কই ওকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।’’
ঘটনাচক্রে, চাকদহের পুরপ্রধান তথা শহর তৃণমূল সভাপতি দীপকের মদতে পুষ্ট বলেই পরিচিত ছিল কালু ও তার সাঙ্গোপাঙ্গেরা। খুনের পরের দিন শান্তনুর বাড়ি গিয়ে দেখা করেন তৃণমূল বিধায়ক। অথচ নিজের ওয়ার্ড হওয়া সত্ত্বেও পুরপ্রধান যাননি। বরং সব অভিযুক্ত খুনে জড়িত নয় বলেও তিনি একাধিক বার দাবি করেন।
তাঁর নামে ওঠা নালিশ শুনে রত্না বলেন, ‘‘শান্তনুকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনতামও না। তাঁর পরিবারকে প্রভাবিত করে অভিযোগে নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। অপরাধীদের সাজা হোক।’’ আর, দীপকের ঠেস, ‘‘আপনারা তো সবই জানেন! নতুন করে আর কী বলার আছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy