Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জাল পেতেও চেষ্টা জলে, জেলায় ছুটছে জাল টাকা

ঠিক এক বছর আগে, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত ৮টায় পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের খবরে চমকে উঠেছিল তামাম দেশ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪১
Share: Save:

ছিল টাকা, হয়ে গেল মূল্যহীন কাগজ!

ঠিক এক বছর আগে, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত ৮টায় পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের খবরে চমকে উঠেছিল তামাম দেশ। ‘মিত্রোঁ’ সম্বোধনের পরে বাকি ধাক্কাটা সামলাতে হিমসিম খেয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল।

কেন্দ্র সরকারের দাবি ছিল, এই নোট বাতিলের ফলে উপকৃত হবে সারা দেশ। কালো টাকা, জাল টাকা ও সন্ত্রাসবাদীদের হাতে টাকার জোগান কমে যাবে। সেই নোট বাতিলের বর্ষপূর্তি হল বুধবার।

এই এক বছরে সত্যিই কি সরকারের দাবি সত্যি হয়েছে? পরিসংখ্যান কিন্তু তেমনটা বলছে না। রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের হিসেব বলছে, এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬৩ লক্ষ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫৭.৫৯ লক্ষ টাকাই উদ্ধার হয়েছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে। জাল নোটের কারবারের রাজ্যে গ্রেফতার হয়েছে মোট ১৩৭ জন। তাদের মধ্যে ৯৬ জন মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে, দিনের পর দিন ব্যাঙ্ক থেকে খালি হাতে ফিরেও দেশের বহু মানুষ ভেবেছিলেন, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে গেলে এই কষ্ট সহ্য করা যায়। কিন্তু এক বছর পরে সেই ভুক্তভোগীদের আক্ষেপ, ‘‘এ পোড়া দেশে কিছুই বদলাবে না।’’

৮ নভেম্বর নোট বাতিল হল। ঠিক তার দু’মাস পরে জানুয়ারির শেষে মালদহের বৈষ্ণবনগরে একটি নতুন ২০০০ টাকার জাল নোট-সহ ধরা পড়ল পিয়ারুল শেখ নামে বছর পনেরোর এক কিশোর। ৮ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরে ৪০টি কড়কড়ে ২০০০ টাকার নোট-সহ ধরা পড়ল বৈষ্ণবনগরের আজিজুর রহমান। তার পর থেকে জাল নোটের কারবার চলছেই।

রাজ্যে জাল নোটের কারবারে বরাবরই শীর্ষে মালদহ। করিডোর হিসেবে তার পরেই ছিল মুর্শিদাবাদে সামশেরগঞ্জ তথা ধুলিয়ান। নোট বাতিলের পরে পুলিশের হিসেব বলছে মালদহকে পিছনে ফেলে দিয়েছে মুর্শিদাবাদ।

মুর্শিদাবাদে বাণিজ্য শহর হিসেবে পরিচিত ধুলিয়ান। গঙ্গা পার হলেই মালদহের বৈষ্ণবনগর। জালনোটের কারবারে সবথেকে বেশি আতঙ্কে থাকেন ধুলিয়ানের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, এমন কোন দিন নেই যে দিন জালনোটের শিকার হননি তাঁরা। জাল নোট থেকে বাঁচতে বহু ব্যবসায়ীকেই দোকানে বসাতে হয়েছে নোট চেনার মেশিন।

নোটবাতিলের পরে তাঁরা ভেবেছিলেন জাল-যন্ত্রণা বুঝি মিটবে। সেই আশায় এখন ছাই পড়েছে। ধুলিয়ানের ব্যবসায়ীদের দাবি, নোটবাতিলে আর যা সুফল মিলুক না কেন, জালনোটের বাড়বাড়ন্ত কমেনি।

প্রভাত জৈন, আজিজুর রহমানের মতো ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘জাল নোটের কারবারিদের ঠেকানো গেল কোথায়? জাল নোটের উৎপাতে এখনও আমাদের তটস্থ থাকতে হয়।’’ রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী, নোটবাতিলের পরেও মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় জাল নোটের কারবারে যে ছবিটা উঠে এসেছে, আতঙ্কের কারণ সেটাই।

গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নোট বাতিলের পরে এ পর্যন্ত রাজ্যে জাল নোট ধরা পড়ার ৮৭টি ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ৪৩টি ঘটনা মুর্শিদাবাদের, মালদহের ২২টি। ধুলিয়ান থেকেই সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ৩৫ লক্ষ টাকা। গ্রেফতার হয়েছে ৩০ জন।

সামশেরগঞ্জের ওসি অমিত ভকত বলেন, “নোট বাতিলের পরে ভেবেছিলাম, জালনোটের হাত থেকে বছর খানেকের জন্যও অন্তত রেহাই মিলবে। কিন্তু তা আর হল কই ?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Fake note নোটবন্দি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE