Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাধা পেরনোর যুদ্ধ চলছে ঢিমেতালেই

বিশ্বদীপ মণ্ডলের অটিস্টিক ছেলের বয়স আট বছর। বহরমপুরের মধুপুরে তাঁদের বাড়ি। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য তিনি নানা জায়গায় দৌড়েছেন। কিন্তু পারেননি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

বিশ্বদীপ মণ্ডলের অটিস্টিক ছেলের বয়স আট বছর। বহরমপুরের মধুপুরে তাঁদের বাড়ি। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য তিনি নানা জায়গায় দৌড়েছেন। কিন্তু পারেননি।

বিশ্বদীপের কথায়, ‘‘কোথাও গিয়ে শুনতে হয়েছে, আমার ছেলে পাগল। কখনও শুনেছি, প্রতিবন্ধী। শেষে ওর কথা ভেবেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের জন্য একটি স্কুল গড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সরকারি সাহায্য পাইনি। তাই এখন বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে বাড়িতেই ওকে পড়াশোনা শেখানোর চেষ্টা চলছে।’’

বিশ্বদীপের মতো বাবা-মায়ের সংখ্যা কম নয়। প্রথমত, সরকার যা-ই বলুক, বেসরকারি বহু স্কুলই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের নেয় না। স্পেশ্যাল এডুকেটর মহম্মদ জিয়ারুল হকের আক্ষেপ, ওই ছেলেমেয়েদের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর সময়ে বিপাকে পড়তে হয় বহু অভিভাবককে। বেশির ভাগ স্কুল তাদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

যাও সরকারি বা সরকার-পোষিত স্কুল এদের ভর্তি নেয়, সঠিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা কার্যত নেই। শুধু নদিয়া জেলাতেই এমন পড়ুয়ার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। প্রতি ব্লক ও পুর এলাকায় তিন জন স্পেশ্যাল এডুকেটর থাকার কথা। সব মিলিয়ে ৮৪ জন। আছে ৫৬ জন। মুর্শিদাবাদে এই সংখ্যা প্রায় ৮৫০০। তাদের জন্য ৯৭ জন স্পেশ্যাল এডুকেটর আছেন।

শুধু মোট সংখ্যা দেখলেই হবে না। কেননা অন্ধ, মূক-বধির এবং বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ধরনের শিক্ষক লাগে। মুর্শিদাবাদে বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ৪৫ জন, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য ২৮ জন এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ২৩ জন শিক্ষক আছেন। মাত্র এক জন আছেন যিনি সব ধরনের বিশেষ পড়ুয়ারই কাজে লাগতে পারেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইলে ছাপা বই লাগে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তা বিনা খরচে জোগায় স্কুল। তার পরেই তা অভিভাবকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আরও আছে। সরকারি নিয়মে, পরীক্ষার সময়ে এদের জন্য রিডার, রাইটার, প্রম্পটার দেওয়ার কথা বলা থাকলেও কার্যত বেশির ভাগ সময়েই সেই ব্যবস্থা হয় না। বাড়তি সময়ও পায় না বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অনেক সময়ে ‘রিসোর্স সেন্টার’ বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে সপ্তাহে দু’দিন ক্লাস করানো হয়। কয়েক মাস আগে এ জন্য যাতায়াত ভাড়া দেওয়া হত। এখন বন্ধ, ফলে পড়ুয়াও কমেছে। তা ছাড়া, শুধু এ ভাবে গোটা বিষয়টা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। স্পেশ্যাল এডুকেটর কৃষ্ণা সাহা জানান, রিসোর্স সেন্টারে পড়ুয়াদের সঙ্গে অভিভাবকদেরও নিয়ে গিয়ে পড়ানোর পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়া হয়। তাতে পুরোপুরি কাজ হয় না। পাঁচ দিন বাদে তারা যখন আসে, দেখা যায়, আগের দিনের পড়া ভুলে গিয়েছে। ফলে যে দ্রুততায় এদের উন্নতি হতে পারত, কার্যক্ষেত্রে তা হয় না।

নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত, মুর্শিদাবাদের পি উলাগানাথন, দু’জনে স্পেশ্যাল এডুকেটর বাড়ানোর এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। অচলায়তন যে সহজে নড়বে না, বলা বাহুল্য।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Autism Children Student Parents School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE