Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সটান এইমস-এ 

রাজ্য সরকার যে ১৮১ একর জমি এইমসকে দিয়েছে, তা আগে ছিল বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য কৃষি খামারের। সেই জমি জবরদখল করে চাষ করত স্থানীয়রা। সেই জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। কিন্তু তাতেও ঠেকানো যাচ্ছে না বহিরাগতদের। পাঁচিল, কাঁটাতার ডিঙিয়ে যাচ্ছে ওরা। এ পর্যন্ত তাও ঠিক ছিল। কিন্তু, জমিতে ঢোকার জন্য এ বার তৈরি করা হয়েছে সুড়ঙ্গও— যা দেখে অবাক মহকুমা প্রশাসনের কর্তা থেকে বিধায়ক।

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

টানাপড়েন কম হয়নি। উত্তর না দক্ষিণ— বাংলার কোন প্রান্তে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস বা এইমস গড়ে উঠবে। মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে বাজি মাত করে কল্যাণী। শহর কল্যাণীর অদূরে বসন্তপুরে শুরু হয় এইমস-এর কাজ।

রাজ্য সরকার যে ১৮১ একর জমি এইমসকে দিয়েছে, তা আগে ছিল বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য কৃষি খামারের। সেই জমি জবরদখল করে চাষ করত স্থানীয়রা। সেই জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। কিন্তু তাতেও ঠেকানো যাচ্ছে না বহিরাগতদের। পাঁচিল, কাঁটাতার ডিঙিয়ে যাচ্ছে ওরা। এ পর্যন্ত তাও ঠিক ছিল। কিন্তু, জমিতে ঢোকার জন্য এ বার তৈরি করা হয়েছে সুড়ঙ্গও— যা দেখে অবাক মহকুমা প্রশাসনের কর্তা থেকে বিধায়ক।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এলাকার লোকজন সকাল-বিকাল নিয়ম করে ঢুকে পড়ছেন এইএমসের এলাকার মধ্যে। এমনিতে ইটের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকতে আছে চরম কড়াকড়ি। গেটে গেটে একাধিক নিরাপত্তাকর্মী মজুত। কিন্তু ঘোড়াগাছা ও আশপাশে লোক এখনও নির্মীয়মাণ এইএমসের ভিতরে চাষ করছেন। লঙ্কা-ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেয়ারা, কলার বাগান দিব্যি রয়েছে আগের মতো। নির্মাণ সংস্থার আপত্তি উড়িয়েই চলছে চাষ। দিন কয়েক আগে সংস্থার তরফে কল্যাণীর মহকুমাশাসক স্বপন কুণ্ডুর কাছে একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। স্বপনবাবু জানান, অভিযোগ পেয়ে তিনি স্থানীয় বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে যান। কথা বলেন স্থানীয় লোকজন ও জন প্রতিনিধিদের সঙ্গেও। তিনি জানান, আলোচনা করে চাষ বন্ধ করা হবে।

রবিবার দুপুর নাগাদ এইএমস-এর মূল ফটক পার হতেই নজরে পড়ল একটা বিজ্ঞপ্তি। সেখানে লেখা, ভিতরে কেউ চাষ করবেন না। কিন্তু ভিতরে যতই এগোনো গেল, নজরে পড়ল নির্মীয়মাণ ভবনের পাশাপাশি চাষের জমি। সেখানে হরেক রকমের মরসুমি আনাজ বেড়ে উঠছে। নির্মাণ সংস্থার এক কর্তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানালেন, এটা একটা সংরক্ষিত এলাকা। প্রচুর দামি যন্ত্রপাতি রয়েছে। তাই বাইরের লোকজনের ঢোকা নিষেধ। কিন্তু এই এলাকার চাষিদের কোনও ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।

কী ভাবে ঢুকছে চাষিরা? এর জন্য অভিনব পন্থা নিয়েছেন তাঁরা। প্রমাণ সাইজের মই বানিয়ে তার সাহায্যে প্রাচীর টপকাচ্ছেন চাষিরা। সকালে মই বেয়ে ঢুকে দুপুর পর্যন্ত চাষের কাজ সারছে। বিকেল নাগাদ আবার মই বেয়ে এইএমস ছাড়ছে তারা। সংস্থার এক কর্মী জানান, বারণ করলেও ফল হয়নি। উল্টে চাষিরা হুমকি দিয়েছে।

পাঁচিলের নীচে কিছু এলাকায় গর্ত। সদ্য বোজানো হয়েছে সেই গর্তগুলি। খোঁজ-খবর করতে জানা গেল, রীতিমতো সুড়ঙ্গ বানিয়েও অনেকে ভিতরে ঢুকত। সম্প্রতি সে সব বুজিয়ে দেওয়া হয়। এইমস-এ কাজ করেন ঘোড়াগাছা ও আশপাশের বহু লোকজন। স্থানীয়দের একাংশের এ ভাবে চাষ করাকে তাঁরাও সমর্থন করতে পারছেন না। নির্মাণ সংস্থার এক কর্মী জানান, তাঁরা আগে কার্যত বেকার ছিলেন। এখন মাসে প্রায় তেরো হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। মহকুমাশাসকের আশ্বাস, ‘‘আর কিছু দিনের মধ্যেই ও সব বন্ধ হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

AIMS Kalyani কল্যাণী
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE