বয়স হারিয়ে। ডোমকলের মাঠে ফুটবল। নিজস্ব চিত্র
লাল-কালো ডুরে, বলটা পায়ের চেটোয় বার দুয়েক নাচাতেই কোমরে হাত উঠে গিয়েছিল ইমরান বিশ্বাসের। মাঠের পাশ থেকে তাঁর মধ্য-বিশ পুত্র নাজিবুল ফুট কাটে, ‘‘আব্বা ঠ্যাংটো খোঁড়া কোর না!’’
ইমরান গত আশ্বিনে বাষট্টি ছাপিয়ে গিয়েছেন। তবে, ভোর ফুটলে হারানো কৈশোরের স্বভাবটা ছাড়তে পারেননি, বল নিয়ে দাপাদাপির অভ্যাসটা এখনও হাঁফ ধরা বুকে টিঁকিয়ে রেখেছেন।
করিমপুরে কার্তিক পালের চায়ের দোকান একরকম কফি হাউসের উত্তাপ। সে সব ছেড়ে সটান ডোমকলে এসেছেন ওই ইমরানের সঙ্গে একটু পায়ের ভাঁজ বুঝে নেওয়ার নেশায়। বুড়োদের দাপুটে ফুটবল, দিন কয়েক আগের বিকেলে ডোমকল-করিমপুরের ভূগোলের দূরত্বটা মুছে দিয়েছিল এ ভাবেই।
কলেজের সদ্য অবসর নেওয়া মানস চৌধুরী বল ধরলেই তাঁর ছাত্রকুল যেমন সোল্লাশে মাঠ কাঁপালেন তেমনই ছোট্ট ট্যাকেলে ইমরান মাটিতে চিৎপটাং হলেই তাঁর ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে উত্তেজনায় নখ খেল, ‘‘খাইস্যা রে, আব্বা উইঠ্যা পড়, আর খেলে কাম নাই!’’
গত রবিবার বিকেলে, ‘ভোরের আলো’র পরিচালনায় চার দলের প্রবীণ ফুটবলে ছেলেবেলার মতো ফুটল ডোমকল। চার দলের প্রতিযোগিতার ফাইনালে হরিহরপাড়া ভোটারেন্স পড়শি জেলা নদিয়া ভেটারেন্সকে নাম মাত্র গোলে হারালেও, হার-জিৎ নয়, আদতে খেলাটা ছিল কৈশোরের স্মৃতির সঙ্গে বার্ধক্যের গোড়ার আলাপ।
ভোরের আলোর পক্ষে সেলিম-উল ইসলাম বলেছেন, ‘‘প্রবীণেরা সুস্থ থাকতে প্রতি দিন ভোরে ফুটবল খেলেন, খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছিল অভ্যাসটা ছড়ডিয়ে আছে করিমপুর, হরিহরপাড়াতেও। তাই সবাইকে ডেকে একটা ছোট্ট খেলার আসর।’’
হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ড প্রাক্তন সেনা কর্মী ইমরান থেকে হাসপাতালের সুপার প্রবীর মাণ্ডি— নাহ, নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারেননি কেউই।
প্রবীর বলছেন, ‘‘নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারলাম না বুঝলেন, ফুটবলের সত্যি জুড়ি নেই। বড্ড ছেলেবেলা মনে পড়ছিল জানেন।’’
ফুটবলের হাত ধরে একটা বিকেল তাঁদের নিয়ে গেল সেই ছেলেবেলায়, কম কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy