Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

করিমপুরে যুবককে খুনে পুলিশের জালে স্ত্রী

ফাঁকা বাড়িতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন বিপ্লব। পরের দিন সকালে পড়শিরা কেউ ডেকে সাড়া পায়নি। পরে বিপ্লবের কাকা বিদ্বেন্দু প্রামাণিক বাড়িতে ঢুকে দেখেন, উঠোনে পড়ে বিপ্লবের রক্তাক্ত দেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩৭
Share: Save:

বিপ্লব প্রামাণিক খুনের ঘটনায় এ বার নতুন মোড়। খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সোমবার পুলিশ গ্রেফতার করল বিপ্লবের স্ত্রী সোমা প্রামাণিককে। মঙ্গলবার তেহট্ট আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১ অক্টোবর, রবিবার করিমপুরের রহমতপুরের বাড়িতে একাই ছিলেন বছর ছত্রিশের যুবক বিপ্লব। তাঁর স্ত্রী সোমা দুই ছেলেকে নিয়ে ছিলেন বাবার বাড়ি, মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙায়। রবিবার সন্ধ্যায় বিপ্লবের বাবা এবং মা-ও গিয়েছিলেন সোমার বাবার বাড়ি। ফাঁকা বাড়িতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন বিপ্লব। পরের দিন সকালে পড়শিরা কেউ ডেকে সাড়া পায়নি। পরে বিপ্লবের কাকা বিদ্বেন্দু প্রামাণিক বাড়িতে ঢুকে দেখেন, উঠোনে পড়ে বিপ্লবের রক্তাক্ত দেহ। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁর দেহ উদ্ধার করে। ওই দিনই বিদ্বেন্দুবাবু করিমপুর থানায় খুনের মামলা রুজু করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সোমবার সন্ধ্যায় বিপ্লবের ভগ্নীপতি, রহমতপুরেরই বাসিন্দা বাবলু রজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরের দিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরায় খুনের কথা কবুল করে বাবলু। পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের পরে বর্তমানে সে-ও জেল হেফাজতে।

পুলিশ জানিয়েছে, বাবলুকে গ্রেফতার করার পরে ওই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। সেই সময় বাবলুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় রক্তমাখা গেঞ্জি ও হাঁসুয়া। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘বাবলুকে জেরা ও এলাকায় কথা বলে আমরা বাবলু-সোমার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পারি। দু’জনের মোবাইলের কল লিস্টও পরীক্ষা করা হয়। তার পরেই সোমবার গ্রেফতার করা হয় সোমাকে। সোমা ও বাবলু দু’জনে খুনের ষড়যন্ত্র করে।’’

১৮ বছর আগে বিপ্লবের দিদির সঙ্গে বিয়ে হয় বাবলুর। বছর ছয়েক আগে কেচুয়াডাঙার সোমার সঙ্গে বিপ্লবের বিয়ে হয়। তাঁদের চার ও এক বছরের দুই ছেলে। বিপ্লবের কাকা বিদ্বেন্দু প্রামাণিক বলেন, “বাবলুর সংসারে অভাব ছিল। কিন্তু পুকুর, বাঁশবাগান সহ প্রায় বিশ বিঘা জমিতে চাষ আবাদ ছিল বিপ্লবের। বাবলুকে ওরা সাহায্য করত। বাবলুরও এ বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল। কিন্তু এমন কাণ্ড ঘটিয়ে বসবে তা আমরা ভাবতে পারিনি।” বিস্মিত পড়শিরাও। বাবলুর স্ত্রীর কথায়, “ঘটনার দিন বিকেলে বাড়িতে হাঁসুয়ায় ধার দিতে দেখেছি। রাতে স্বামী বাড়িতে ছিল না। পুলিশ ধরার পরে জানতে পারলাম স্বামীই নাকি ভাইকে খুন করেছে।’’ বিপ্লবের মা মায়াদেবী বলেন, ‘‘সপ্তমীতে দুই ছেলেকে নিয়ে বিপ্লবের স্ত্রী বাপের বাড়ি গিয়েছিল। বিপ্লব অষ্টমীতে গিয়ে দশমীতে বাড়ি ফিরে আসে। রবিবার সন্ধ্যায় আমরা কেচুয়াডাঙায় গিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, সে দিন আমরা বাড়িতে থাকলে ছেলেটাকে এ ভাবে হারাতে হত না।’’ পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে তাদের মনে হয়েছিল সম্পত্তির কারণেই খুন। জেরায় বাবলু জানিয়েছিল, তাকে ঘর ও জমি দেওয়ার ইচ্ছে ছিল শ্বশুরের। কিন্তু বিপ্লবের তাতে আপত্তি ছিল। সেই কারণেই সে খুন করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrested Woman Murder Complaint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE