মায়ের বকুনি বা পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট। মোবাইলে গেম খেলতে না পারা বা বাবা-মা বেড়াতে নিয়ে না যাওয়া। এমন সব তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনায় স্কুল-পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতায় চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষক থেকে মনোবিদ, সকলেই। মাত্রাতিরিক্ত অভিমান বা অবসাদ থেকে ছাত্রছাত্রীদের বের করে আনতে স্কুলে কর্মশালার উপরে জোর দিচ্ছেন সকলেই। ইতিমধ্যে কয়েক জায়গায় তা শুরুও হয়েছে।
মঙ্গলবার লালবাগের কুতুবপুর নব-আদর্শ হাইস্কুলে এক কর্মশালায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রী গুটিগুটি পায়ে কাউন্সলরের কাছে এসে বলে, ‘‘এক যুবকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছে। পড়াশোনায় মন বসাতে পারছি না! কী করি?’
গত ১১ নভেম্বর বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে কর্মশালা করেছিলেন মুর্শিদাবাদ আঞ্চলিক স্টুডেন্টস হেল্থ হোম কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন স্কুল থেকে দু’জন শিক্ষক ও দু’জন অভিভাবক মিলিয়ে ছ’শো জন ছিলেন। ১৪ নভেম্বর বহরমপুরের হিকমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বয়ঃসন্ধির মানসিক ও শারিরীক সমস্যা নিয়ে কর্মশালা হয়। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অভিভাবক, পড়ুয়া, শিক্ষকের সভা হয় জিয়াগঞ্জ রাজা বিজয় সিংহ বিদ্যামন্দিরেও। অভিভাবকেরা অনুযোগ করেন, ছেলেমেয়ে ভীষণ বদমেজাজি। তাদের অন্যায় জেদ, উদ্বেগ, মুখে মুখে তর্ক করা, অস্বাভাবিক ভয়, পরীক্ষা ভীতি, অমনোযোগ, রাত-দিন টিভি আর মোবাইলে মেতে থাকা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। শরীর-মনের পরিবর্তন ছাড়াও নেশা, রাত জাগা, ফাস্টফুডে আসক্তি, নির্লিপ্ততা নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ বাড়তি বিপদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
যার পরিণতি কখনও ব্লু হোয়েলের মত মারণ খেলার দিকে পা বাড়ানো, কখনও সরাসরি আত্মহত্যা। কৃষ্ণনগর কুইনসি গার্লস হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা পথ দুর্ঘটনায় মারা যেতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে মেয়েটি, পরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়। ২০১৬-র অক্টোবরে। ওই স্কুলেরই দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর নামে মোবাইল চুরির অপবাদ ওঠায় সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সে যাত্রায় প্রাণে বাঁচলেও কিছু দিন পরেই সে আত্মহত্যা করে।
মুর্শিদাবাদ স্টুডেন্টস হেল্থ হোমের কর্তা শ্যামলকুমার সাহা জানান, তাঁদের ক্লিনিকে পড়ুয়ারা যেমন সমস্যা নিয়ে আসছে, অভিভাবকেরাও আসছেন। কলকাতা স্টুডেন্টস হেল্থ হোমের সঙ্গে যুক্ত মনোবিদ সুব্রত ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘বাবা-মায়ের সম্পর্কের টানাপড়েনও প্রভাব ফেলে। সন্তান হিংস্র হয়ে ওঠে, কথা না শোনার প্রবণতাও তৈরি হয়।’’
নিজেদেরও যে পাল্টাতে হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy