Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হোম থেকে পালানোই যেন রুটিন

 কখনও বাজে খাবার, কখনও বা একঘেয়েমি। যে কারণেই হোক, বারবার সরকারি হোম থেকে পালাচ্ছে আবাসিকেরা। কিন্তু তাতেও প্রশাসনের কর্তাদের ঘুম ভাঙছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৮
Share: Save:

কখনও বাজে খাবার, কখনও বা একঘেয়েমি। যে কারণেই হোক, বারবার সরকারি হোম থেকে পালাচ্ছে আবাসিকেরা। কিন্তু তাতেও প্রশাসনের কর্তাদের ঘুম ভাঙছে না।

গত মঙ্গলবার করিমপুরের হোম থেকে পালিয়েছিল দু’টি বালক। রাত ১২টা নাগাদ চাপড়া বাজারে ঘুরতে দেখে তাদের উদ্ধার করে হোমে ফেরায় পুলিশ। বছরখানেক আগেও করিমপুরের অন্য একটি হোম থেকে পালিয়েছিল পাঁচ আবাসিক। তাদেরও সকলকে উদ্ধার করা গিয়েছিল।

গত ২০ জানুয়ারি ভোরে আবার বহরমপুর শহরের কাদাই এলাকার এক হোমে দোতলার ঘরের জানালার গ্রিল ভেঙে পালায় ১৪ জন। বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। তাদের বাড়ি বিহার, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সমনজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ওই ১৪ জনের মধ্যে তিন জন বাদে সবাইকে উদ্ধার করে হোমে ফেরানো হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।’’ কয়েক মাস আগেও পাশের একটি হোম থেকে কয়েক জন পালিয়েছিল। এখনও তাদের খোঁজ মেলেনি।

প্রশ্ন হল, হোমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকঠাক থাকলে আবাসিকেরা কী করে পালাচ্ছে? করিমপুরের হোমটির দাবি, সিনিয়রদের সঙ্গে সরস্বতী পুজো দেখতে বালক দু’টি ফেরেনি। কেন তাদের সঙ্গে হোমের কোনও কর্মী ছিলেন না, সে প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। এর আগে রানাঘাট, চাকদহ, তেহট্টের হোম থেকে ছেলেরা পালিয়েছিল। কৃষ্ণনগরের একটি হোম থেকে পালিয়েছিল দুই কিশোরী। এক জনকে উদ্ধার করা গেলেও আর এক জনের খোঁজ নেই।

মাস কয়েক আগে অতিরিক্ত জেলাশাসকেরা নদিয়ার সব ক’টি হোমে গিয়ে পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেছিলেন। তার পরে হোমগুলিতে খেলার নানা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে পরিচয়পত্র। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “এর পরেও আবাসিকেরা পালালে তার দায় হোম কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।” জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অনিন্দ্য দাসের দাবি, “প্রতিটি হোমেই দু’জন করে নিরাপত্তারক্ষী আছে। নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করতে প্রতিটি হোমে চারটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাচ্ছি।”

মুর্শিদাবাদ জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শবনম রামস্বামী আবার বলেন, ‘‘নাবালকেরা চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে যেতে চাইবেই।’’ কাদাই এলাকার হোমটির কর্মীদের একাংশ কিন্তু জানাচ্ছেন, খাতায়-কলমে তিন জন নৈশপ্রহরী থাকলেও আদতে এক জনও নেই। দু’জন ঝাডুদার আছেন। তাঁদের এক জন রান্না করেন, অন্য জন গেট পাহারা দেন। খাতায়-কলমে শিক্ষক থাকলেও সেই কাজ করেন এক জন গায়িকা। খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। কিন্তু একটু বেচাল হলেই মারধর করা হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বলেন, ‘‘হোম থেকে আবাসিকদের পালানো নিয়ে তদন্ত চলছে।’’

এক করে ঘটনা ঘটে আর এ রকম ‘তদন্ত’ হয়। রুটিন পাল্টায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food Home Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE