Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রীর ফোন নম্বর চাওয়ায় যুবককে পিটিয়ে খুন

সুব্রতর বাবা নাড়ু হালদার কালীগঞ্জ থানায় একটি খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ বুধবার রাতে ফরিদপুরের বাসিন্দা পিন্টু ঘোষ, খোকন ঘোষ ও রবীন ঘোষকে গ্রেফতার করে।

নিহত যুবক সুব্রত হালদার।

নিহত যুবক সুব্রত হালদার।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৫
Share: Save:

মেয়েটি শিক্ষকের কাছ থেকে পড়ে বাড়ি ফিরছিল। ছেলেটি মেয়েটির কাছে ফোন নম্বর চেয়েছিল।

তার ‘অপরাধ’ বলতে এইটুকুই! সোমবার বিকেলে কালীগঞ্জের ফরিদপুরের ওই ঘটনায় মাটিয়ারির বাসিন্দা সুব্রত হালদারকে (২২) বেধড়ক মারধর করে স্থানীয় কিছু লোকজন। গুরুতর জখম সুব্রতকে প্রথমে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল ও পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বুধবার সন্ধ্যায় সেখানেই মারা যান সুব্রত।

সুব্রতর বাবা নাড়ু হালদার কালীগঞ্জ থানায় একটি খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ বুধবার রাতে ফরিদপুরের বাসিন্দা পিন্টু ঘোষ, খোকন ঘোষ ও রবীন ঘোষকে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনায় আরও কারা জড়িত তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘খুনের অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চলছে তদন্তও।’’

সুব্রতর বাবা নাড়ু হালদারের পিতলের বাসনপত্রের ব্যবসা রয়েছে। সুব্রতও বাবার সঙ্গে সেই ব্যবসা দেখতেন। নাড়ুর অভিযোগ, ‘‘লোকজনের মুখে শুনেছি, সুব্রত নাকি একটি মেয়ের কাছে ফোন নম্বর চেয়েছিল। এটাই ওর অপরাধ? বিষয়টি আমাকে কিংবা পুলিশকেও জানাতে পারত। সে সব না করে ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলল!’’

এ দিকে, মেয়েটির আত্মীয়, ধৃত এক জনের স্ত্রীর দাবি, ‘‘শুধু ফোন নম্বর চাইলে কেউ কিছু বলত না। ওই ছেলেটা ও তার বন্ধুরা মদ খেয়ে মেয়েটিকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করছিল। আশপাশের লোকজন নিষেধ করলেও শোনেনি। শুনেছি, লোকজনের তাড়া খেয়ে ছেলেটি বাইক নিয়ে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে জখম হয়।’’

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, মেয়েটি যে ওই পথেই যাতায়াত করে সে কথা জানতেন সুব্রত। মাঝেমধ্যে তিনে ওই রাস্তায় দাঁড়িয়েও থাকতেন। এ দিনও বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি। মেয়েটি যখন টিউশন নিয়ে ফিরছিল, সুব্রত তার পিছু নেন। সাহস করে তার ফোন নম্বরও চেয়ে বসেন। বিষয়টি দেখতে পান মেয়েটির পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীদের একাংশ।

লোকজনের তাড়া খেয়ে সুব্রত বাইক নিয়ে পালিয়ে যান। তাঁদের তাড়া করে অন্য রাস্তায় গিয়ে ধরে ফেলেন কিছু লোকজন। সুব্রত বাইক থেকে পড়ে যান। তাঁদের মারধরও করা হয়। মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর জখম হন সুব্রত। ফরিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তুষার পালিত বলেন, ‘‘বাইকে তিন জন ছিল। যে কোনও কারণে তারা পড়ে যায়। কয়েকজন মারধরও করে। গুরুতর জখম ছেলেটাকে এলাকার লোকজন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়।’’

সুব্রতর মা প্রভাতী হালদার ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। কোনও মতে তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটাকে রাস্তায় ফেলে ওরা পিটিয়ে মেরে ফেলল। ওদের শাস্তি পেতেই হবে।’’ সুব্রতর দাদা অমিত হালদারের অভিযোগ, ‘‘এখন অনেকেই ব্যাপারটাকে দুর্ঘটনা বলে চালাতে চাইছে। কিন্তু শুধুমাত্র একটি মেয়েকে ফোন নম্বর চাওয়ার অপরাধে গ্রামের কয়েক জন নীতি পুলিশ ভাইটাকে মেরে ফেলল।’’

সুব্রতর সঙ্গে যে দুই বন্ধু ছিলেন তাঁদের এক জন বলছেন, ‘‘আমরা ফরিদপুরের দিকে ঘুরতে যাচ্ছিলাম। মেয়েটিকে দেখেই সুব্রত তার সঙ্গে কিছু কথা বলে। তার পরে ফোন নম্বর চায়। মেয়েটির তার কাকাকে গিয়ে বিষয়টি জানায়। তার পরেই পাঁচ-ছ’জন লোক আমাদের বেধড়ক মারে। কোনও কথাই শুনতে চায়নি। মেয়েটির সঙ্গে সুব্রত বা আমরা কোনও অভব্য আচরণ করিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth Murder mass lynching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE