Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কর্মিসভায় ফুল-মিষ্টিও দ্বন্দ্বের অস্ত্র

দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন হুমায়ুন কবীর। কিন্তু তাঁর একদা অনুগামীরা এখনও ইন্দ্রনীল সেনের বিরোধিতা ছাড়েননি। সেটা আর এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল এ দিন মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের কর্মিসভায়। আর এই বিরোধিতায় ফুলের তোড়া থেকে ছানাবড়া, সবই হয়ে উঠল তাঁদের হাতিয়ার।

বহরমপুরে তৃণমূলের কর্মিসভায় ইন্দ্রনীল সেন, শুভেন্দু অধিকারী এবং মান্নান হোসেন। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বহরমপুরে তৃণমূলের কর্মিসভায় ইন্দ্রনীল সেন, শুভেন্দু অধিকারী এবং মান্নান হোসেন। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:২১
Share: Save:

দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন হুমায়ুন কবীর। কিন্তু তাঁর একদা অনুগামীরা এখনও ইন্দ্রনীল সেনের বিরোধিতা ছাড়েননি। সেটা আর এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল এ দিন মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের কর্মিসভায়। আর এই বিরোধিতায় ফুলের তোড়া থেকে ছানাবড়া, সবই হয়ে উঠল তাঁদের হাতিয়ার। শেষ পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী কোনও মতে পরিস্থিতি সামাল দিলেন। যথাসাধ্য ঐক্যের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। আবার ‘মাতব্বরি না করে’ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালন করার ব্যাপারে তিনি পরোক্ষে বার্তা দিয়ে গেলেন ইন্দ্রনীলকেও।

দ্বন্দ্বের সূচনা হয় একেবারে সংবর্ধনা থেকেই। জেলার কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডলের ঘোষণা মতো শুভেন্দু অধিকারী, ইন্দ্রনীল সেন ও অন্য নেতাদের ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানাতে সবে শুরু করেছেন দলের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক সুবোধ দাস। এমন সময় ছ’টা ফুলের তোড়া আর ১০ কেজি ওজনের একটা ছানাবড়া হাতে নিয়ে সদলবল মঞ্চে উঠে পড়েন উৎপল পাল, যিনি কট্টর ইন্দ্রনীল-বিরোধী, বহিষ্কৃত নেতা হুমায়ুন কবীরের একদা-ঘনিষ্ঠ। তাঁর অনুগামী প্রিয়তোষ ঘোষ মাইক্রোফোনের দখল নেন। পাল্টা সংবর্ধনা শুরু হয়। উৎপলের ঘনিষ্ঠরা শুভেন্দু, মান্নান, সুব্রত সাহা, চাঁদ মহম্মদ ও ইমানি বিশ্বাসকে ফুলের তোড়া দেন। অথচ নেহাত সৌজন্য দেখিয়েও শুভেন্দুর ঠিক পাশে বসা ইন্দ্রনীলের দিকে ফুলের তোড়া এগিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে মান্নান হোসেনের নির্দেশে তাঁর হাতেও শেষ অবধি ফুলের তোড়া তুলে দেওয়া হয়।

ফুলের পর মিষ্টির পালা। প্রিয়তোষ ঘোষণা করেন, “এ বার ১০ কেজি ওজনের ছানাবড়া তুলে দেওয়া হবে আমাদের প্রিয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাতে।” তৎক্ষণাৎ প্রিয়তোষের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, “আমাকে একা কেন? ইন্দ্রনীলেরও নাম বল!” অগত্যা ইন্দ্রনীলের নামটাও ঘোষণা করতে হয়। শুভেন্দু ও ইন্দ্রনীল মিলিত ভাবে ছানাবড়া বোঝাই পিতলের গামলা গ্রহণ করেন।

ফুল-মিষ্টি পর্বের আগেই অবশ্য ঘটে গিয়েছে মিছিল পর্ব। কমির্সভা শুরুর কিছুক্ষণ আগে উৎপল পালের নেতৃত্বে ইন্দ্রনীল-বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন বহরমপুর শহরে বড়সড় একটি মিছিল বের করে। মিছিলের সামনের ফেস্টুনে কেবল শুভেন্দুকে স্বাগত জানানো হয়েছে। স্লোগানে মমতা, শুভেন্দুর নাম এলেও, একবারও ওঠেনি ইন্দ্রনীলের নাম। ওই মিছিলের উদ্দেশ্য ছিল, রবীন্দ্রসদনের প্রবেশপথে শুভেন্দুকে সংবর্ধনা দেওয়া। সে কথা মাইকে ঘোষণাও করেন দলের জেলা কমিটির নির্বাহী সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডল। বেগতিক বুঝে শুভেন্দু ও ইন্দ্রনীলকে পিছনের দরজা দিয়ে রবীন্দ্রসদনের ভিতরে নিয়ে যান মান্নান-অনুগামীরা।

তবে বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ মান্যতা পেয়েছে শুভেন্দুর ভাষণে। ইন্দ্রনীলের ‘স্বৈরাচারিতা’ নিয়ে বহু অভিযোগ উঠেছে দলে। সেই ইন্দ্রনীলকে পাশে বসিয়ে শুভেন্দু বলেন, “ইন্দ্রনীল ও আমি, দু’জনেই পর্যবেক্ষক। পর্যবেক্ষদের মাতব্বরি করার কথা নয়, হস্তক্ষেপ করার কথা নয়। সবাইকে বাদ দিয়ে নিজেরাই সব করে দিতে পারব এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমরা খবরদারি, মাতব্বরি করতে আসিনি।” গোষ্ঠী বিবাদের কথাও প্রকাশ্যে স্বীকার করে শুভেন্দু বলেন, “তুই বড় না মুই বড়— মুর্শিদাবাদ জেলায় এই দ্বন্দ্বে আমরা ভুগছি। এটা বন্ধ করতে পারলে এ জেলায় এ বারের পুরভোটে ১০৭টি আসনই তৃণমূল পাবে।”

দলের অন্দরের খবর, এ দিন দলের এক তাবড় নেতা কড়া নির্দেশ জারি করেছিলেন, ইন্দ্রনীলের বিরুদ্ধে যতই ক্ষোভ থাকুক, তা যেন প্রকাশ্যে না আসে।

এ দিনের কর্মিসভায় শুভেন্দু কি খুশি? ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলছেন, “এত দিন মুর্শিদাবাদে একজোট হয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে কোনও কর্মিসভা করতে পারেনি দল। এ দিন সেটা যে অন্তত করা গিয়েছে, সেটাই বা কম কী?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE