Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গাফিলতি দেখালে পুরস্কার, ঘোষণা নদিয়া প্রশাসনের

পুরস্কারের পাশাপাশি এ বার থেকে জুটবে শাস্তিও। নদিয়া জেলায় শৌচাগারের ব্যবহার ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করতে এমনই পদক্ষেপ করতে চলছে জেলা প্রশাসন। বাড়িতে শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ খোলা মাঠে মলত্যাগ করেন তাহলে তাঁর সমস্ত রকম সরকারি পরিষেবা যেমন সার্টিফিকেট দেওয়া, আর্থিক সহায়তা, পেনশন-সহ বিভিন্ন রকম ভাতা সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০০:৫১
Share: Save:

পুরস্কারের পাশাপাশি এ বার থেকে জুটবে শাস্তিও। নদিয়া জেলায় শৌচাগারের ব্যবহার ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করতে এমনই পদক্ষেপ করতে চলছে জেলা প্রশাসন।

বাড়িতে শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ খোলা মাঠে মলত্যাগ করেন তাহলে তাঁর সমস্ত রকম সরকারি পরিষেবা যেমন সার্টিফিকেট দেওয়া, আর্থিক সহায়তা, পেনশন-সহ বিভিন্ন রকম ভাতা সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হবে। জেলাবাসীকে শৌচাগারে অভ্যস্ত কারনোর জন্যই এমন পদক্ষেপ বলে জেলা প্রশাসনের দাবি।

৩১ মার্চের পর থেকে এই সিদ্ধান্ত বলবত্‌ করা হবে। শুধু তাই নয় পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৩৩২০ টি পাড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা তাঁদের এলাকায় নজরদারি চালাবেন। বিশেষত যে সব খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার অভ্যাস রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই সঙ্গে মার্চ মাস থেকে সমস্ত পঞ্চায়েত ও পুরসভা এলাকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা করা হবে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করা সামাজিক অপরাধ।

জেলা শাসক পি বি সালিম বলেন, ‘‘শুধু শৌচাগার তৈরি করে দিয়েই বসে থাকতে রাজি নই। আমরা চাই জেলার প্রতিটি মানুষ শৌচাগার ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন।” তাই লাগাতার প্রচার কর্মসূচির পাশাপাশি এই ধরনের কড়া পদক্ষেপ নিতে চাইছে প্রশাসন।

নির্মল ভারত অভিযান, একশো দিনের কাজের প্রকল্প ও জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন প্রকল্পকে একত্রিত করে নদিয়া জেলা প্রশাসন ‘সবার শৌচাগার’ প্রকল্প চালু করে। তার আগে প্রশাসনের তরফে সমীক্ষা করে দেখা যায় গোটা জেলায় ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার পরিবারে কোন শৌচাগার নেই। তাঁরা খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে থাকেন।

এরপরই ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর থেকে গোটা জেলায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরি করে দিতে থাকে প্রশাসন। চার মাসে প্রায় এক লক্ষ শৌচাগার তৈরি করতে সক্ষম হয়। জেলা প্রশাসনের দাবি এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৬৮ সংখ্যক পরিবারে শৌচাগার তৈরি করে দিতে পেরেছেন এবং আগামী মার্চ মাসের মধ্যে বাকি পরিবারে শৌচাগার তৈরি করতেও পারবেন।

মার্চ মাসের পরে ইউনিসেফ ও অমর্ত্য সেনের প্রতীচী ট্রাস্ট গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তারপরই তাঁরা সংশাপত্র তুলে দেবেন। পাশাপাশি তারা জেলার সমস্ত মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এটা কিন্তু আমাদের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারণ এ ক্ষেত্রে যেহেতু তৃতীয় পক্ষ খতিয়ে দেখবে তাই কোন রকম গোঁজামিল দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে এটাও ঘটনা তৃতীয় পক্ষ ঘোষণা করলে আমাদের সাফল্য নিয়ে কোন রকম প্রশ্ন তুলতে পারবে না কেউই।’’

আর সেটা করতে গিয়ে শুধু যে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে তাই নয় সেই সঙ্গে পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জেলা শাসক বলেন, “মার্চ মাসের পরে যদি কেউ দেখিয়ে দিতে পারেন যে কোনও বাড়িতে শৌচাগার নেই তাহলে তাঁকে পুরস্কৃত করব।’’

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেশের অন্যান্য জেলাকেও নদিয়া মডেল অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি। প্রথম থেকেই এই প্রকল্প সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে ইউনিসেফ। এর মধ্যে তারা দু’বার জেলায় এসে প্রকল্পের কাজকর্ম খতিয়ে দেখে গিয়েছেন।

ইউনিসেফের পূর্বাঞ্চলের প্রধান আসিদুর রহমান বলেন, “শৌচাগার তৈরি তো হল। কিন্তু সেটা সকলে ব্যবহার করছে কি না সেটাই আসল বিষয়। নদিয়া জেলা প্রশাসন যে ভাবে এত অল্প দিনের মধ্যে এই কাজটা করতে পেরেছে তা খুবই প্রশংসনীয়।” আমরা অন্যান্য দেশের কাছে নদিয়ার এই সাফল্যকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরব।’’ ইউনিসেফের শৌচাগার ও জল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এস এম দাবে জানিয়েছেন এই মুহূর্তে নদিয়া জেলার যে সব বাড়িতে শৌচাগার আছে তার ৯০ শতাংশ মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করছেন। শনিবারের ১২২ কিলোমিটারের এই বিশাল মানব শৃঙ্খলকে তারা গণ আন্দোলনের রূপ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nadia sanitary prize
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE