Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গৌরী দত্তের শহরেই মুকুলের নামে ফ্লেক্স

রাজ্যের সর্বত্র তাঁর অনুগামীদের চিহ্নিত করে ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই মুকুল রায়ের সমর্থনে পোস্টার পড়ে গেল নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। জন্মলগ্ন থেকে দলীয় সংগঠনের অন্যতম প্রধান স্থপতি মুকুলের প্রতি তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা-কর্মী যে এখনও ‘বিশ্বস্ত’, তা নিয়ে কোনও মহলেই সংশয় নেই।

কৃষ্ণনগরে মুকুল রায়ের সমর্থনে লাগানো হয়েছে এই ফ্লেক্স। —নিজস্ব চিত্র।

কৃষ্ণনগরে মুকুল রায়ের সমর্থনে লাগানো হয়েছে এই ফ্লেক্স। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

রাজ্যের সর্বত্র তাঁর অনুগামীদের চিহ্নিত করে ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই মুকুল রায়ের সমর্থনে পোস্টার পড়ে গেল নদিয়ার কৃষ্ণনগরে।

জন্মলগ্ন থেকে দলীয় সংগঠনের অন্যতম প্রধান স্থপতি মুকুলের প্রতি তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা-কর্মী যে এখনও ‘বিশ্বস্ত’, তা নিয়ে কোনও মহলেই সংশয় নেই। তিনি দল ছাড়লে কত সাংসদ, বিধায়ক, নেতা তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারেন, তা নিয়ে দুই শিবিরেই হিসেব-নিকেশ চলছে।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কৃষ্ণনগর পুরসভার সামনে ও গভর্নমেন্ট কলেজের মোড়ে ফ্লেক্স টাঙিয়ে চলে যায় এক দল যুবক। তাতে লেখা, ‘বাংলার জনপ্রিয় জননেতা সকলের কাছের মানুষ মুকুল রায় জিন্দাবাদ’। ফ্লেক্স দেওয়া হয়েছে ‘নদিয়া জেলার ছাত্র যুব সম্প্রদায়’-এর তরফে, যে নামে কার্যত কোনও সংগঠন নেই। কিন্তু টিএমসিপি এবং যুব তৃণমূলের একাংশ যে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, ওই নাম তারই ইঙ্গিতবাহী বলে দলের জেলা নেতাদের একাংশ মনে করছেন।

দলনেত্রী আগেই মুকুলের নানা ক্ষমতা কেড়ে নিলেও নদিয়া জেলার পর্যবেক্ষকের পদ থেকে সরাননি। বিশেষ করে রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমায় তাঁর একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত ইতিমধ্যে মুকুল-ঘনিষ্ঠদের চিহ্নিত করে ছেঁটে ফেলার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। জেলার যুব সভাপতি থেকে মহিলা সংঠনের সভানেত্রী, সর্বত্র তাঁর লোক বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। দলের নেতা-বিধায়কদের কড়া নজরে রাখা হচ্ছে। কারা এখনও মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বা তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল, তার মাপজোক চলছে। যাঁরা সত্যি মুকুলের নন অথচ গৌরীবাবুর বিরোধী, তাঁদেরও ‘মুকুল-ঘনিষ্ঠ’ তকমা দিয়ে ছেঁটে ফেলা হতে পারে বলে জেলা তৃণমূলের একটি মহলের আশঙ্কা।

এ দিন মুকুলের সমর্থনে দু’টি ফ্লেক্স কিন্তু রানাঘাট বা কল্যাণী নয়, গৌরীবাবুর খাসতালুকেই লাগানো হয়েছে। কৃষ্ণনগর শহরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, “একেবারে জেলা সদরে গৌরীশঙ্কর দত্তের নাকের ডগায় এমনটা করার সাহস যে কেউ দেখাতে পারে, তা আমরা কল্পনাই করতে পারিনি।” স্বভাবতই উজ্জীবিত মুকুল-শিবির এটাকে জেলা সভাপতির প্রতি ‘বিদ্রোহী’দের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। মুকুলের হাত যে বহু দূর প্রসারিত, সেই বার্তাও দেওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রশ্ন হল, এই কাণ্ড ঘটাল কারা? কার মদতে?

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, গৌরীবাবুর ছেলে তথা টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অয়ন দত্তের বিরোধী একটি গোষ্ঠীই ফ্লেক্স লাগানোয় যুক্ত। তবে শুধু গুটিকয়েক যুবকের যে এই দুঃসাহস হবে না, বরং তাদের পিছনে কোনও বড় মাথা কাজ করছে বলেই অনেকের সন্দেহ। কে তিনি? দুপুরে ফ্লেক্স লাগিয়ে আসা এক যুবক ফোনে বলেন, “আমরা এখন সামনে আসতে চাইছি না। দাদা বারণ করেছেন।’’ কে ‘দাদা’ তা অবশ্য তিনি বলতে চাননি।

তাঁদের পরের কর্মসূচি কী?

যুবকটির বক্তব্য, ‘‘আমরা এখনই কোনও গণ্ডগোলে জড়াতে চাইছি না। বরং বুঝতে চাইছি, সাধারণ কর্মীরা কী ভাবছেন, ওই ফ্লেক্স দেখে তাঁদের কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।” অর্থাৎ জলে যদি নামতেই হয়, তা মাথায় রেখে জল মাপার চেষ্টা চালাচ্ছে মুকুল-শিবিরও।

গৌরীবাবু অবশ্য প্রকাশ্যে গোটা ঘটনাকে লঘু করে দেখানোরই চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতে, ‘‘বেনামে কেউ ফ্লেক্স, হ্যান্ডবিল, ব্যানার, পোস্টার দিলে সে সবের কোনও গুরুত্ব থাকে না। বাংলার বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের তরফে এই সব বালখিল্য আচরণের উত্তরও আশা করা উচিত নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mukul roy gauri shankar datta tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE