পথে ধারে ঠাঁই হয়েছে টাউন সার্ভিস বাসের।— নিজস্ব চিত্র।
পুরসভার হিসেবে, শহরে টুকটুক চলাচল করে ৬৫৯টি। কিন্তু টুকটুক চালকরাই বলছেন, অন্তত বারোশো টুকটুক গাড়ি সকাল থেকে রাত অবধি শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এত বিপুল পরিমাণ টুকটুকের দাপটে লোকসানের মুখে পড়ছে বাস মালিকেরা। শহরের ভিতরে চলাচলের জন্য টাউন সার্ভিস বাসের মালিকেরা যাত্রী না পেয়ে বাস বিক্রির চিন্তা করছেন। এমনকী, অনেকেই ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছেন বাস।
নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরে বাসস্ট্যান্ড থেকে স্টেশনে যাওয়ার জন্য রয়েছে ‘টাউন সার্ভিস’ বাস। কিন্তু ওই একই রুটে এই মুহূর্তে প্রায় বারোশো টুকটুক চলছে। গত কয়েক মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে টুকটুকের সংখ্যা। টুকটুকের সংখ্যা যতই বেড়েছে ততই সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বাস মালিকরা। যাত্রী না পেয়ে পরিবহণ ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলছে বলে দাবি বাস মালিকদের। এই অবস্থায় তাঁরা বাস বিক্রির কথা ভাবছেন। কেউ কেউ আবার অন্য রুটে বাস চালানোর জন্য আবেদন করেছেন।
নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত বলেন, ‘‘আগে টাউন সার্ভিসের বাসের সংখ্যা ছিল ১৭টি। গত ছ’মাসে ১০টি বাস রুট থেকে উঠে গিয়েছে। যাত্রী না পেলে এমনটা হবেই।’’
বাস মালিকদের দাবি, ব্যবসায় এই মন্দার এর পিছনে দায়ী ব্যাটারি চালিত টুকটুক গাড়ি। কয়েক মাসে শহরে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে টুকটুকের সংখ্যা। শিক্ষিত বেকার যুবকদের পাশাপাশি অনেক রিকশাওয়ালাও টুকটুক চালাচ্ছেন। শুধু কী শহরের লোকজন, শহর লাগোয়া অনেক গ্রামের যুবকও টুকটুক কিনে কৃষ্ণনগর শহরে চালাতে শুরু করছেন। এক টুকটুক গাড়ির চালক বলেন, ‘‘পুরসভা অনুমোদিত টুকটুক গাড়ির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’শো। কিন্তু বহু লোকজন অনুমতির কোনও তোয়াক্কা না করেই শহরের রাস্তায় টুকটুক চালাতে শুরু করেছে।’’
কিন্তু টুকটুকের ধাক্কায় কেন বাস মালিকদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে? কেনই বা টুকটুকে চাপতে লোকজন বেশি পছন্দ করছেন?
অনেকেই মনে করেন, খোলামেলা এই গাড়ি আয়তনে ছোট হওয়ার দরুন শহরের অলিতে-গলিতে অনায়াসেই ঢুকে পড়তে পারে। তাই বাসের তুলনায় এই গাড়ি পছন্দ করছেন শহরের লোকজন। শহরের বাসিন্দা অরুপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘চারদিক খোলামেলা হওয়ায় টুকটুক বেশ আরামদায়ক। সেই কারণেই লোকজন টুকটুকে চাপতে বেশি পছন্দ করছেন।’’
এই অবস্থায় বাস মালিকদের হাল খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম দিকে বাসের ভাড়া কমিয়ে সঙ্কট মোকাবিলার চেষ্টা করেছিলেন বাস মালিকরা। কিন্তু তাতেও কোনও ফল হয়নি। পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, ‘‘বিষয়টির দিকে খেয়াল রেখে শহরে টুকটুকের সংখ্যা কোনওভাবেই সাতশো পার হতে দেব না।’’
পুরপ্রধান যাই বলুন না কেন, বাস মালিকদের সঙ্কট কাটার কোনও লক্ষণই নেই। অজিত রায় প্রায় ১৮ বছর আগে প্রথম ‘টাউন সার্ভিস’ বাস চালু করেছিলেন। কিন্তু যাত্রী না পেয়ে লোকসানের বোঝা বাড়তে থাকায় তিনি মাস ছ’য়েক আগে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দিনের পর দিন লোকসানে বাস চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই বাস তুলে নিয়েছি।’’
২০০০ সাল থেকে ‘টাউন সার্ভিস’ বাস চলছে প্রদ্যুৎ তরফদারের। মাস পাঁচেক আগে তিনিও বাস চালানো শিকেয় তুলে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘লোকসানের বহর বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়েই বাস তুলে নিয়েছি। নতুন রুটে বাস চালানোর জন্য আবেদন করেছি। তা পেলে ভাল। না পেলে সত্যিই সমস্যায় পড়তে হবে।’’
নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এত লাভজনক একটা রুট কী ভাবে নষ্ট হয়ে গেল! অথচ কেউই সে ভাবে কিছু করছেন না। টুকটুকের সংখ্যা এতটাই বাড়ছে যে, বাস মালিকরা বাধ্য হয়ে বাস চালানো বন্ধ করে দিচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy