পোস্ট অফিসে ভাঙা ভল্ট। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
দিন সাতেক আগে জিয়াগঞ্জ ডাকঘর লুঠ করে প্রায় চার লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সে ঘটনার কিনারা হওয়া দূরে থাক, মুর্শিদাবাদ জেলার অন্য প্রান্ত, রঘুনাথগঞ্জ ডাকঘরে বুধবার রাতে প্রায় একই ভাবে ১৫ লক্ষ টাকা বোঝাই ভল্ট নিয়ে উধাও হল ডাকাতেরা।
যা থেকে, জেলা জুড়ে পুলিশের রাতের টহলদারির বহর স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। উঠেছে, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নও।
ডাকঘরের চত্বরেই গাড়ি রেখে, ডজন দুয়েক তালা, লোহার গেট এবং শাটার ভাঙার পরে ডাকঘরের সিমেন্টের পাকা দেওয়ালের মধ্যে গাঁথা ওই ভল্ট কী করে তুলে নিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা, পুলিশের কাছে তার কোনও উত্তর মেলেনি। জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর শুধু বলছেন, “দু’টি ডাকঘরের ডাকাতির পিছনে ঝাড়খণ্ডের একটি দল রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করা যায়নি।”
পুলিশের সন্দেহ পনেরো লক্ষ টাকা বোঝাই ওই ভল্ট, প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার ড্রাফ্ট এবং বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের শংসাপত্র যে নিপুণ কায়দায় তুলে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা, তাতে ওই ডাকাতির পিছনে ডাকঘরের কোনও কর্মীর জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সুধাকরের ব্যাখ্যা, “দু’টি ক্ষেত্রেই এত নিখুঁত ভাবে টাকা ভর্তি ভল্টটি চিহ্নিত করা হয়েছে যে, কর্মীর জড়িত থাকার প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।”
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, রঘুনাথগঞ্জের ব্যস্ততম ম্যাকেঞ্জি রোডে রাতে কী আদৌ পুলিশি টহল চলে?
তাঁরা জানান, ডাকঘরটির সামনে অজস্র দোকানপাট। প্রতি দিন রাত প্রায় বারোটা পর্যন্ত সে সব দোকানের অধিকাংশই খোলা থাকে। রাস্তায় লোক চলাচলও থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। ডাকঘরের লাগোয়া এলাকায় ডাক ও তার বিভাগের কর্মী আবাসনও রয়েছে। তা সত্ত্বেও অন্তত ঘণ্টা তিনেকের ওই ‘অপারেশন’ কারও নজরে পড়ল না? স্থানীয় থানার পুলিশ কর্মীরা দাবি করলেও, এলাকার বাসিন্দারা শীত-রাতে পুলিশি টহল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তবে, ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকঘর চত্বরে ঢোকার প্রধান লোহার ফটকটি প্রতি দিনই খোলা থাকে। সেখানে পার্কিং করা থাকে বেশ কিছু বেসরকারি গাড়ি। ওই দিন রাতে লাল রঙের একটি টাটা সুমোকে ডাকঘরে ঢুকতেও দেখা গিয়েছিল বলে জানান তাঁরা। ডাকঘরেরই কর্মী কল্যাণ রায় বলেন, “রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম, কিছুই বুঝিনি।” তিনি জানান, পরের দিন বড়দিনে কর্মীদের পিকনিক করতে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। সকালে উঠেই তাঁদেরই প্রথম নজরে পড়ে ডাকঘরের পিছনের দরজা ও তালা ভাঙা।
পুলিশ এসে ভাঙা দেওয়াল, তালা আর লন্ডভন্ড টেবিল চেয়ারের মাঝে খুঁজে পায় পানের পিক আর রক্তের দাগ। পুলিশের অনুমান, ভাঙচুরের সময় দুষ্কৃতীদের কারও হাত কেটে গিয়েছিল। তবে ওইটুকুই। জিয়াগঞ্জের পরে রঘুনাথগঞ্জের ডাকঘরের লুঠের কিনারা রয়ে গিয়েছে বিশ বাঁও জলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy