Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভরা বাজারের মধ্যে স্ত্রীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পলাতক স্বামী

স্বামীর কাছে থাকা বড় ছেলের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তাকে পৌঁছে দিতে হবে স্কুলে। খবর পেয়ে নদিয়ার বাজিতপুর থেকে করিমপুরে স্বামীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন বছর আঠাশের সুজাতা স্বর্ণকার। বৃহস্পতিবার সকালে বাজারে সুজাতার আর্ত চিৎকারে চমকে উঠল করিমপুর। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া মহিলার মুখে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে। পাশে পড়ে রয়েছে ছেলের জন্য কেনা নতুন পেন, ক্লিপবোর্ড, ছেলের স্কুলে যাওয়ার নীল-সাদা পোশাক। বধূটির মুখে অ্যাসিড ছোড়ায় অভিযুক্ত তাঁর স্বামী অবশ্য ততক্ষণে পালিয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৩
Share: Save:

স্বামীর কাছে থাকা বড় ছেলের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তাকে পৌঁছে দিতে হবে স্কুলে। খবর পেয়ে নদিয়ার বাজিতপুর থেকে করিমপুরে স্বামীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন বছর আঠাশের সুজাতা স্বর্ণকার। বৃহস্পতিবার সকালে বাজারে সুজাতার আর্ত চিৎকারে চমকে উঠল করিমপুর। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া মহিলার মুখে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে। পাশে পড়ে রয়েছে ছেলের জন্য কেনা নতুন পেন, ক্লিপবোর্ড, ছেলের স্কুলে যাওয়ার নীল-সাদা পোশাক। বধূটির মুখে অ্যাসিড ছোড়ায় অভিযুক্ত তাঁর স্বামী অবশ্য ততক্ষণে পালিয়ে গিয়েছে।

এসডিপিও (তেহট্ট) সুনীল সিকদার বলেন, “অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করা হয়েছে। সে ওই অ্যাসিড কোথা থেকে পেল, তা জানার চেষ্টা চলছে।”

বাজিতপুর হালদারপাড়ার বাসিন্দা সুজাতাদেবীর সঙ্গে ১৫ বছর আগে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় করিমপুরের বেলতলাপাড়ার বাসিন্দা গয়না-শিল্পী মণিকুমার স্বর্ণকারের। দম্পতির বড় ছেলে করিমপুরের একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স পাঁচ বছর। বিয়ের পর থেকে সুজাতাদেবী স্বামীর সঙ্গে করিমপুরে থাকতেন। বধূটির পরিবারের দাবি, বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই অতিরিক্ত পণের দাবিতে অত্যাচার শুরু হয় সুজাতার উপরে। দু’বছর আগে সমস্যা মাত্রা ছাড়ানোয় দু’ছেলেকে নিয়ে তিনি ফেরত আসেন বাপেরবাড়িতে।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছ’য়েক আগে মণি শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রী, ছেলেদের নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে চলে যায়। মাস দু’য়েক আগে সে আবার করিমপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ফেরত আসে। ছেলেদের নিয়ে সুজাতা ফেরেন বাপের বাড়িতে। এ বারেও স্বামীর ‘অত্যাচারের কথা’ আত্মীয়দের জানিয়েছিলেন তিনি। তিন সপ্তাহ আগে তাঁর বড় ছেলে যায় বাবার কাছে। তার পর থেকে সে বাবার কাছেই ছিল।

সুজাতাদেবীর কাকা ভীমচন্দ্র সরকারের দাবি, দিন দু’য়েক আগে মণি এবং তার দিদি ঊর্মিলা দাস ফোনে সুজাতাকে বৃহস্পতিবার করিমপুরে যেতে বলে। তাঁর কথায়, “ওরা বলেছিল, বৃহস্পতিবার বড় ছেলের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। অথচ, কাজ থাকায় ওদের কেউ তাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে পারবে না। আমার ভাইঝিকেই যেতে হবে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন করিমপুর বাসস্ট্যান্ডে সুজাতাকে নিতেও এসেছিল মণি। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুজাতা বলেন, “বাড়ির পথে বাজারের মধ্যে স্বামী আমার মুখে জলের মতো কিছু একটা ছুড়তেই জ্বালাপোড়া করে উঠল। ও যে এমন করবে ভাবিনি!” আত্মীয়দের দাবি, মাস দেড়েক আগেও এক বার বাপেরবাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে সুজাতাকে মোটর বাইক থেকে ফেলে দিয়েছিল মণি। ট্রাকের চাকার সামনে পড়েও বেঁচে গিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় যেতে রাজি হননি বধূটি।

হাসপাতালের ডাক্তারেরা জানান, প্রাথমিক ভাবে তাঁদের অনুমান সুজাতার গায়ে নাইট্রিক অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে। মুখ-সহ শরীরের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গিয়েছে বধূটির। পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, স্বর্ণশিল্পে নাইট্রিক অ্যাসিডের ব্যবহার থাকায় মণির পক্ষে তা জোগাড় করা কঠিন নয়। কিন্তু এক সময় করিমপুরের একটি দোকানে কাজ করলেও মণি এখন কোথায় কাজ করে, তা সুজাতা বা তাঁর পরিবারের কেউ জানেন না।

করিমপুরের ভাড়াবাড়িতে গিয়ে মণি, তার বড় ছেলে এবং মণির দিদির সন্ধান পায়নি পুলিশ। সুজাতার বড় ছেলে পরীক্ষা দিতে যায়নি স্কুলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

acid husband wife injured fugitive
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE