Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিয়রে ঝুলছে পেঁয়াজ, ঘুম উবেছে নওদাবাসীর

দাম দেখে কারও চোখে জল কারওবা রাতের ঘুম উবেছে। পেঁয়াজের দাম কিলোগ্রাম প্রতি ৬০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ক্রেতার চোখের জলের কারণ না হয় বোঝা গেল, কিন্তু রাতের ঘুমে কোপ কেন? মুর্শিদাবাদে পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রথম নওদা ব্লকের বহু চাষি জানালেন গত সাত দিনে নওদা থানা এলাকার বেশ কয়েক’টি জায়গায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেই চুরির তালিকায় পেঁয়াজ না থাকলেও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কৃষিজীবীরা।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
নওদা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১২
Share: Save:

দাম দেখে কারও চোখে জল কারওবা রাতের ঘুম উবেছে।
পেঁয়াজের দাম কিলোগ্রাম প্রতি ৬০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ক্রেতার চোখের জলের কারণ না হয় বোঝা গেল, কিন্তু রাতের ঘুমে কোপ কেন?
মুর্শিদাবাদে পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রথম নওদা ব্লকের বহু চাষি জানালেন গত সাত দিনে নওদা থানা এলাকার বেশ কয়েক’টি জায়গায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেই চুরির তালিকায় পেঁয়াজ না থাকলেও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কৃষিজীবীরা। ঘরের দাওয়ায় ঝোলানো পেঁয়াজে চোখ রেখে রাত জাগা শুরু করেছেন তাঁরা।
পেঁয়াজের দাম হু হু করে চ়়ড়তে থাকায় দিন কয়েক আগে মুম্বইয়ের কিছু পেঁয়াজ চুরির খবর সামনে এসেছে। মাসখানেক আগেও যে পেঁয়াজ বাজারে মেরেকেটে ১৫ টাকা কিলোগ্রাম প্রতি বিক্রি হত, এখন তা বিকোচ্ছে চারগুণ বেশি দামে। পুলিশেরও আশঙ্কা, ছিঁচকে চোরদের ‘টার্গেট’-এর তালিকায় উপরে দিকে চলে আসতে পারে পেঁয়াজ। তা টের পেয়ে কোমর বেঁধে নেমেছেন নওদা এলাকার বাসিন্দারাও। সকাল-দুপুরে তো বটেই রাতেও নেক নজর থাকছে পেঁয়াজকে।
জেলা উদ্যান পালন দফতরের হিসেবে, নওদার ৭টি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষের সঙ্গে যুক্ত অন্তত ১৫ হাজার কৃষক। এলাকার চাষিদের কাছে এখন প্রায় ৪০ হাজার কুইন্ট্যাল পেঁয়াজ মজুত আছে। ‘বিপদ’ সেখানেই। আশঙ্কার ছবিটা কী রকম?
চিত্র ১: নওদার ঝাউবোনা গ্রামের স্কুল পড়ুয়া সোমা মণ্ডল পড়াশোনা সেরে ঝাঁটা হাতে ঘর-দোর পরিষ্কার করছিল। সে কাজ শেষ হতে সটান চলে গেল সিলিংয়ে ঝোলানো সারি সারি পেঁয়াজের দিকে। পরখ করল, সেগুলি ঠিকঠাক রয়েছে কিনা। ঝাড়পোছ চলল সেখানেও!

চিত্র ২: নওদার বালির বাসিন্দা মিরণ শেখ আমতলা বাজারে টর্চ সারতে গিয়েছেন। ঘণ্টা দু’য়েক ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মিস্ত্রি জানালেন এক দিন অপেক্ষা করলে ভাল হয়। মিরণ নাছোড়বান্দা, ‘‘না দাদা, ওটি পারব না। আজই চাই।’’ কেন? ফিসফিসিয়ে জানালেন, দোতলার ঘরে বেশ কিছুটা পেঁয়াজ রয়েছে যে! বাড়িতে তেমন লোকজনও না থাকায় রাত জাগতে হবে সে কথাও লুকোলেন না।

আগাম সতর্কতার আরও নানা ছবি রয়েছে। পরেশনাথপুরের বাসিন্দা সুজয় মণ্ডল বাড়ির পাশে রাখা পেঁয়াজ বাছাই করতে করতে বললেন, ‘‘আমতলা বাজারে বিস্কুট ও কেকের দোকান ভেঙেছে চোরে। সামান্য খাবার জিনিস চুরি হচ্ছে। পেঁয়াজ চুরি হতে কতক্ষণ?’’

পেঁয়াজ চাষের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জানালেন, বদ্ধ ঘরের বদলে উঠোনে বাঁশের মাচা করে পেঁয়াজ রাখলে অনেক দিন ভাল থাকে। চুরির আশঙ্কায় অনেকেই ঘরে না শুয়ে মাচা সংলগ্ন জায়গায় বাঁশ-কাঠ দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে সেখানে রাত কাটাচ্ছেন। এমনই এক মাচা বানিয়েছেন নওদার মিন্টু মণ্ডল। প্রশ্ন করতেই গজ গজ করতে করতে বললেন, ‘‘বাইরে এত টাকার পেঁয়াজ রয়েছে। ঘরে শুলে বারবার উঠে দেখতে হয়। তাই উঠোনেই ঘর বানিয়ে পাহারা দিচ্ছি।’’ অনেকেই ইতিমধ্যেই পাইকারের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। আগাম টাকাও নিয়েছেন। কিন্তু, পাইকাররা এখনও সব পেঁয়াজ না নিয়ে যাওয়ায় স্বস্তি ফেরেনি অনেকেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE