সুনসান জাতীয় সড়ক। বাহাদুরপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
বুধবার দিনের শেষে বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি নদিয়ায় বন্ধ সর্বাত্মক। এ দিন জেলার নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসা একের পর এক ছবি দেখিয়ে সংগঠনের নেতারা দাবি করেছেন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটা তাঁদের কাছে স্বস্তির। কর্মীরাও উৎসাহিত। শাসক দলের নেতাকর্মীদের অবশ্য দাবি, বন্ধ ভেস্তে দিয়েছেন সাধারণ মানুষই।
সাধারণ ধর্মঘটের দিনে কৃষ্ণনগর শহরে প্রভাব পড়েছে ভালই। এ দিন সরকারি অফিস-কাছারি খোলা থাকলেও সাধারণ মানুষকে তেমন ভাবে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। শিক্ষকরা এলেও দেখা মেলেনি পড়ুয়াদের। অলিতে গলিতে দু’চারটে ছোটখাট দোকান খোলা থাকলেও শহরের অধিকাংশ দোকান ছিল বন্ধ। তবে অন্য বন্ধের দিনের মতো এ দিনও শহরের প্রধান বাজার পাত্রবাজার খোলা ছিল। ট্রেন স্বাভাবিক চলাচল করেছে। তবে যাত্রী ছিল না বললেই চলে।
শহরে ভিতরে কিছু টুকটুক চলতে দেখা গেলেও অন্য গাড়ি চলেনি। সরকারি বাস চললেও রাস্তায় নামেনি বেসরকারি বাস। বুধবার বেলার দিকে কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিঠু শেখ কিছু অনুগামী নিয়ে বসে। সার দিয়ে বাস দাঁড়িয়ে। কর্মীদের দেখা নেই। বাস শ্রমিক সংগঠন তাঁদের দখলে থাকলেও রাস্তায় বাস নামল না কেন? মিঠু শেখের জবাব, ‘‘শ্রমিকেরা রাজি থাকলেও মালিকেরা রাস্তায় বাস নামাতে চাননি। আমাদের কথাও শোনেনি।’’ নদিয়া জেলার বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন শ্রমিকেরাই বাস চালাতে রাজি ছিলেন না।
এ দিন নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বন্ধের সমর্থনে মিছিল বের করে সমর্থকেরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-এর দাবি, বন্ধ সর্বত্মক। মানুষ তাঁদের পাশে থেকেছেন। কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া স্টেশনে সকাল দশটা নাগাদ বন্ধ সমর্থকেরা ট্রেনের তারে কলার পাতা ফেলে ট্রেন চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা করে। কিছু সময়ের মধ্যেই অবশ্য ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। বেলা এগারোটা পঞ্চাশ নাগাদ মাজদিয়া স্টেশনে গেদে-শিয়ালদহ শাখার শিয়ালদহগামী ট্রেন অবরোধ করে বন্ধ সমর্থকরা। প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ পৌঁছে তাঁদের হঠিয়ে দেয়।
কৃষ্ণনগরে বড় অশান্তি না হলেও নদিয়ার তাহেরপুর থানা এলাকার বাদকুল্লায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএমের মিছিলে আক্রমণ চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ দিন সকাল দশটা নাগাদ বন্ধের সমর্থনে এলাকায় মিছিল বের করে সিপিএম। বাদকুল্লা স্টেশন থেকে বাজারের দিকে আসা ওই মিছিল থেকে দোকান বন্ধ রাখার আবেদন জানানো হচ্ছিল। অভিযোগ, সেই মিছিলকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করে তৃণমূল কর্মীরা। প্রতিবাদ করলে মিছিলের উপরে হামলা চালায় তৃণমূলের বাইকবাহিনী। মুহূর্তে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিল। তৃণমূলের হামলায় সেই সময় অন্তত পাঁচ জন সমর্থক আহত হন বলে সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ। আহতদের মধ্যে একাদশ শ্রেণির ছাত্র রিপন সিকদার এবং বাদকুল্লা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য আহমেদ আলি ধবকও রয়েছেন।
সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সদস্য সুপ্রতীপ রায়ের অভিযোগ, মিছিলে আক্রমণের পরে বাদকুল্লা লোকাল কমিটির অফিসে চড়াও হয় তৃণমূল কর্মীরা। জানলা, চেয়ার-টেবিল, লাইট, নেতৃত্বের ছবি ভাঙচুর করা হয়। অফিসে প্রহৃত হন প্রবীণ দলীয় কর্মীরাও। অভিযোগ মানতে চাননি জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। বাদকুল্লার হামলার ঘটনায় পুলিশ দুই বন্ধ সমর্থককে গ্রেফতার করেছে।
এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ কিছু সময়ের জন্য রানাঘাট চাবি গেটে রেল অবরোধ করে বন্ধ সমর্থকেরা। পরে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এ জন্য, রেল চলাচলে ব্যাঘাত হয়নি বলে রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। ক্লাস কেন হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে রানাঘাট ২ ব্লকের সরিষাডাঙা ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম বিশ্বাসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান একাংশ বাসিন্দা। প্রধান শিক্ষক উত্তমবাবু অবশ্য জানান, ছাত্র না আসায় এ দিন ক্লাস করানো সম্ভব হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy