Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অপর্ণা বাগ হত্যা মামলায় ফাঁসি বদলে যাবজ্জীবন

ঘুঘড়াগাছিতে অপর্ণা বাগ খুনের মামলায় গত বছর ১১ জনকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল কৃষ্ণনগর আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশে পুনর্বিচার করে শনিবার তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০১:৩১
Share: Save:

বদলে গেল ফাঁসির সাজা। ঘুঘড়াগাছিতে অপর্ণা বাগ খুনের মামলায় গত বছর ১১ জনকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল কৃষ্ণনগর আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশে পুনর্বিচার করে শনিবার তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল।

শুক্রবার প্রধান অভিযুক্ত লঙ্কেশ্বর ঘোষ ওরফে লঙ্কা-সহ সকলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কৃষ্ণনগর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (তৃতীয়) মধুমিতা রায় এ দিন সাজা ঘোষণা করেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় জানান, অনেকে মিলে খুন এবং খুনের চেষ্টা ছাড়াও অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন অভিযুক্তদের আত্মীয়-পরিজন। রায় শুনে কেঁদে ফেলেন অনেকেই। সাজাপ্রাপ্তদের এজলাস থেকে হাজতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ে গাড়ির পিছনে ছুটতে থাকেন তাঁরা। প্রিজন ভ্যানের জানলা দিয়ে সাজাপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতে থাকেন অনেকে। ভ্যানের ভিতর থেকে চিৎকার করতে থাকেন সাজাপ্রাপ্তেরাও। তবে ফাঁসির আদেশ রদ হওয়ায় অনেকেই স্বস্তি পেয়েছেন।

২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ কৃষ্ণগঞ্জে ঘুঘড়াগাছি গ্রামে একটি বিতর্কিত জমির দখল নিতে যান তৃণমূল কর্মী লঙ্কা ও তাঁর সঙ্গোপাঙ্গেরা। ওই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চাষ করে আসছিলেন অপর্ণা বাগের মতো ৫৫ জনের পরিবার। বন্দুক উঁচিয়ে দু’টো ট্রাক্টর চালিয়ে জমির ফসল নষ্ট করে প্রায় ২২ বিঘা জমি দখল করা শুরু হয়। গ্রামবাসীরা বাধা দিতে এলে গুলি ছোড়া হয়। সেখানেই লুটিয়ে পড়েন অপর্ণা বাগ। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র এবং শ্যামলী তরফদার নামে এক মহিলা।

ওই ঘটনায় ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও এক জন এখনও পলাতক। গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (তৃতীয়) পার্থসারথী মুখোপাধ্যায় ১১ জনেরই ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু হাইকোর্ট আসামিদের জবানবন্দি শোনা থেকে পুরো প্রক্রিয়া ফের করার নির্দেশ দিয়ে মামলাটি কৃষ্ণনগরে ফেরত পাঠায়।

এ দিনও কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সব আসামিই দাবি করেন, তাঁরা নির্দোষ। সরকারি আইনজীবী বলেন, এই ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরল’ অর্থাৎ ফাঁসির যোগ্য কি না তা বিচারকের বিচার্য বিষয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আগের পর্যবেক্ষণ যেন এই রায়ের উপরে কোনও প্রভাব না ফেলে। ফাঁসির সাজা বহাল রাখলে তেমন প্রভাব পড়েছে বলে আসামি পক্ষের মনে হতে পারে।

রায় ঘোষণার পরে বিচারক এজলাস ছাড়তেই ফেটে পড়েন লঙ্কা। চিৎকার করে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকেন তিনি। সঙ্গে গলা মেলান অন্য আসামিরাও। আসামি পক্ষের আইনজীবী কাজল ঘোষ বলেন, “আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।”

অপর্ণার স্বামী মেয়ের বাড়িতে চলে যাওয়ায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে গুলি খেয়েও বেঁচে যাওয়া শ্যামলী বলেন, ‘‘ওরা সাজা পেয়েছে, এতেই আমি খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aparna Bag Murder Arrest Life Imprisonment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE